খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমান থেকে একধাপ এগিয়ে খুনিদের সংসদে বসিয়েছেন: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা; প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানে জিয়াউর রহমান থেকেও খালেদা জিয়া একধাপ এগিয়ে জনগণের এ সংসদে খুনিদের এনে বসান বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান যেমন ইনডেমনিটি ও বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন, তেমনি খালেদা জিয়া আরো একধাপ উপরে গিয়ে জনগণের সংসদে এনে খুনিদেরকে বসান।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বুধবার বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে সাবেক ডেপুটি স্পিকার, সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, কুমিল্লা-৭ আসনের এমপি অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুতে গৃহীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এসব কথা বলেন।
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে যে নির্বাচনটা করেছিলেন, সেটা সকল রাজনৈতিক দল বয়কট করেছিল। সেটা ছিল ভোটারবিহীন নির্বাচন। সারাদেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্বাচনটা করা হয়। সেই নির্বাচনে চান্দিনা থেকে রশিদকে এমপি করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসেন খালেদা জিয়া এবং বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসান। চান্দিনা থেকে রশিদকে এবং চুয়াডাঙ্গা থেকে হুদাকে (বঙ্গবন্ধুর অপর খুনি) এমপি করে নিয়ে আসা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান যেমন ইনডেমনিটি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন, তেমনি খালেদা জিয়া আরো একধাপ উপরে গিয়ে জনগণের সংসদে এনে একজন খুনিকে বসান। পরবর্তীতে সেই আসনে অবশ্য আলী আশরাফই জনগণের ভোটে জয়যুক্ত হন। কাজেই তিনি সবসময়ই একটা আদর্শ নিয়ে চলতেন এবং তিনি কেবল রাজনীতিবিদ নন একাধারে বিশিষ্ট লেখকও ছিলেন। ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে ১৫টি বই লিখেছেন।
তিনি বলেন, সব থেকে দুর্ভাগ্যের হলো তিনি যে এলাকা থেকে নির্বাচন করতেন কুমিল্লার চান্দিনা এলাকা সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদের বাড়ি। তারপাশেই খন্দকার মোশতাকের (বাড়ি)।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ একজন অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ ও গবেষক ছিলেন। এ রকম বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন এমপিকে আমরা হারালাম। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের। তিনি একজন প্রবীণ এসপি হিসেবে নবীন এমপিদের নানা রকম পরামর্শ দিতেন। আরো দুঃখজনক হলো যে, এ সংসদের অনেক সদস্যকেই হারিয়েছি আমরা।
সংসদ নেতা বলেন, পাঁচ বার অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি হয়েছেন। সপ্তম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বিভিন্ন কমিটিতে কখনো চেয়ারম্যান কখনো সদস্য হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর ’৮০ সালে লন্ডনে থাকাকালীন তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হওয়ার কথা উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ সবসময় জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের যেমন প্রতিবাদ করেছেন, তেমনি ৩রা নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডে খুনিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীও দিয়েছিলেন।
আলী আশরাফ অসুস্থ থাকাকালীন তার নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা ছিল হয়তো ফিরে আসবেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। তিনি না ফেরার দেশেই চলে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আলী আশরাফের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান।
এছাড়া সংসদে সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ, তোফাজ্জল হোসেন সরকার, জামাল উদ্দিন আহম্মদ, খুররম খান চৌধুরী, মো. রেজা খান, জাহানারা বেগম, আনোয়ার হোসেন, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইয়ূমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।তাছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
চলমান সংসদের কোনো আইনপ্রণেতা মারা গেলে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক মুলতবির রেওয়াজ থাকায় এরপরই স্পিকার সংসদের এদিনের অধিবেশন মুলতুবি করে দেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপিত হয়।