বাংলাদেশকে উল্টো ক্রিকেট শেখাল যুক্তরাষ্ট্র

সময়: 7:34 pm - May 21, 2024 | | পঠিত হয়েছে: 10 বার
বাংলাদেশকে উল্টো ক্রিকেট শেখাল যুক্তরাষ্ট্র

ক্রীড়া প্রতিবেদক; র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবধান ১০। গুটি কয়েক টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্যে স্পষ্ট দুই দলের শক্তির ব্যবধানও। যুক্তরাষ্ট্রে আবার ক্রিকেট প্রচলন খুব বেশি নয়। তাই বাংলাদেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্রিকেট শেখার কথা। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র উল্টো বাংলাদেশকে ক্রিকেট শেখাল ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে।

তিন বল হাতে রেখে বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৪ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশকে হারানোর স্বাদ পেল মার্কিনরা। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।

৯৪ রানে ৫ উইকেট হারানো যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে দরকার ছিল ৬০ রান। জয়ের জন্য তখন প্রতি ওভারে স্বাগতিকদের দরকার ছিল প্রায় ১২ রান করে। সেটাইকে মামুলি বানিয়ে তোলেন ৬ষ্ঠ উইকেটে ৬২ রানের জুটি গড়া কোরি অ্যান্ডারসন ও হারমিত সিং। তিন বল আগে নিশ্চিত করে দেন যুক্তরাষ্ট্রের জয়। শেষ দিকে হারমিতের ব্যাটে ওঠা ২৫৩ স্ট্রাইক রেটের ঝড়ই বাংলাদেশের হারের পথ সহজ করে দেয়। তবে স্বাগতিকদের ইনিংসের শুরুতেই খানিকটা আভাস মিলেছিল সহজে হাল ছাড়বে না। জয় নিশ্চিত করে সেই প্রমাণটাই দিয়েছে মার্কিনরা।

উদ্বোধনী জুটিতে অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল ও স্টিভেন টেইলর মাত্র ১৯ বলে তোলেন ২৭ রান। ভাগ্যের সহায়তা না থাকলে প্রথম সাফল্যটা আসত না বাংলাদেশ শিবিরে। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে টেইলরের করা শট বোলার শরিফুল ইসলামের হাতে লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত করে। তাতেই প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক মোনাঙ্ক ফেরেন ১০ বলে ১২ রানে। তার বিদায়ের পর তিনে নামা আন্দ্রিয়াস গোয়েস প্রমাণ করেন কেন বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি লিগে তিনি নিয়মিত সুযোগ পান। দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ২৩ রানের ছোট্ট ঝড় তোলেন তিনি। ২৩ রানের ওই ইনিংস খেলার পথে টেইলরের সঙ্গে গড়েন ৩৮ রানের জুটি।

এরপরেই খানিকটা ঝিমিয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটিং লাইনআপ। টেইলর ২৯ বলে ২৮ ও অ্যারন জোন্স ১২ বলে করেন ৪ রান। তাদের দুজনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে কক্ষপথে ফেরান বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। মাঝে গোয়েসকে ফেরান লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। আর শরিফুলের শিকার হন নিতিশ কুমার। তার ব্যাটে ১০ বলে আসে ১০ রান। এতে স্কোরবোর্ডে ৯৪ রান তুলতে মার্কিনরা হারায় ৫ উইকেট। ভালো শুরুর পর দ্রুত উইকেট হারালেও পথ হারায়নি। অ্যান্ডারসন ও হারমিত ধরেন হাল। নিউজিল্যান্ড থেকে মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমানো অ্যান্ডারসনের মাথা ঠাণ্ডা ইনিংসে মূলত ম্যাচে টিকে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তার যোগ্য সমর্থনে অপর প্রান্তে ঝড় তোলেন হারমিত সিং। দুই চার ও তিন ছক্কায় ১১ বলে খেলেন ৩৩ রানের ইনিংস। অন্যদিকে রয়েসয়ে খেলা অ্যান্ডারসন ২৫ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই খায় হোঁচট। দুই ওপেনার সৌম্য ও লিটনের শুরুটা মনমতো না হওয়ায় শুরু ওই হোঁচটের। তিন বলের ব্যবধানে দুজনের বিদায়ের আগে স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৩৪ রান। তাদের ওই ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় প্রথম ১২ ওভারে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে মোটে ৭১ রান। পরের ৮ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তোলে ৮২ রান। তাতে শান্ত বাহিনীর সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৫৩। স্কোরবোর্ডে দেড় শ ছাড়ানো এই ইনিংসের পর স্পষ্ট জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে থাকা হতশ্রী ব্যাটিংয়ের ধারা থেকে বেরোতে পারেননি শান্ত-লিটনরা।

এর প্রমাণ অবশ্য টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারের ব্যাটেও ছিল। ৮ রানে দু-দুবার জীবন পাওয়া লিটন থামেন ১৫ বলে ১৪ রানে। দুই জীবনের একবার উইকেটের পেছনে তার ক্যাচ ছাড়েন অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। পরের ওভারেই লিটন বাঁচেন রান আউট থেকে। তৃতীয়বার আর জীবন পাননি। জেসি সিংয়ের ভেতরে ঢোকা বলে হন লেগ বিফোরের শিকার। অথচ ফর্মে থাকা তানজিদ তামিমের বদলি হিসেবে সুযোগ মিলেছিল তার। সেই সুযোগটাও ঠিকঠাক কাজে লাগাতে ব্যর্থ এই ডানহাতি। দলীয় ৩৪ রানে বিদায় নেওয়া লিটনের বিদায়ের পর ফেরেন সৌম্য সরকারও। তিন বলের ব্যবধানে স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না করে ফেরেন তিনি। আউট হন ১৩ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রান-খরায় ভোগা অধিনায়ক শান্ত প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ। ১১ বলে কাপ্তানের ব্যাটে আসে মাত্র ৩ রান। স্টিভেন টেইলরের বলে শিকার হন স্ট্যাম্পিংয়ের। সিনিয়রদের এমন একের পর এক ব্যর্থতায় ত্রাতা তরুণ তাওহিদ হৃদয়। পেসার আলী খানের ব্যাটে আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে চারটি চার ও দুই ছক্কায় তার ব্যাটে আসে ৫৮ রান। শান্ত ও সাকিবকে নিয়ে দুই জুটিতে ৩৯ বলে ৩৪ রান তোলেন হৃদয়। শান্তর পর সাকিবও ফেরেন দ্রুতই। ১২ বলে ৬ রান আসে তার ব্যাটে। হৃদয়ের সঙ্গে রিয়াদের ৪৭ বলে ৬৭ রানের জুটিই মূলত বাংলাদেশকে দেয় ১৫৩ রানের সংগ্রহের ভিত। অভিজ্ঞ মাহমুউল্লাহ রিয়াদ খেলেন ২২ বলে ৩১ রানের ইনিংস। শেষ দিকে ৫ বলে ৯ রানের ইনিংস খেলেন জাকের আলী অনিক।

যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে স্টিভেন টেইলর ৯ রানে নেন দুই উইকেট। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নেন সৌরভ নেত্রালকর, আলী খান ও জেসি সিং।

এই বিভাগের আরও খবর