হঠাৎ মুন্সীগঞ্জ জেলায় চুরি ডাকাতির উৎপাত!
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে চুরি-ডাকাতি হলেও এর প্রভাব অনেকটা কমছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর সদস্য রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই থেকে রক্ষা করতে তারা সর্বদা তৎপর তাছাড়া দেখা গেছে মহামারীর আগের থেকে রাজধানীতে অনেকটা চুরি ডাকাতির ঘটনা কম ঘটছে।
জানা গেছে, এই চুরি ডাকাতির ঘটনার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর আশেপাশের শহর গুলোতে ।দুষ্কৃতিকারীরা রাজধানীর আশেপাশে শহরকে টার্গেট করেই চলছে। তার কারণে ঘটছে নানা ঘটন-অঘটন । বিভিন্ন চুরি ডাকাতি ছিনতাইসহ এ ধরনের ঘটনা বেশিরভাগ ঘটতে শুরু করেছে মুন্সিগঞ্জ জেলায়। রাজধানীর এই পাশের জেলায় বেশ কিছু বড় ধরণের চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ জেলায় চুরি ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে কারণ হলো এলাকার মানুষ বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তারা বৃহস্পতিবার থেকে নিজ এলাকায় চলাফেরা করেন ব্যবসায়ী হওয়ায় তাদের কাছে সবসময় নগদ অর্থ থাকে অধিকাংশ মানুষের কাছে লক্ষাধিক টাকার বেশি সব সময় থাকে যার কারণে দুস্কৃতিকারীরা তাদেরকে টার্গেট করে দিনে দুপুরে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়।
ওই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রটি আরো নিশ্চিত করেন, দুস্কৃতিকারীরা মুন্সীগঞ্জে এলাকার ব্যবসায়ীদের ঢাকা থেকেই তার টার্গেট করে। অনেক ব্যবসায়ী লোকাল চলাফেরা করেন যার সুযোগটা দুস্কৃতিকারীরা নিয়ে থাকে। তাছাড়া মুন্সিগঞ্জ এলাকা গ্রাম্য হওয়ার কারণে রাস্তাঘাট কিছু কিছু জায়গায় ফাঁকা থাকায় চুরি ডাকাতির ঘটনাটা একটু বেশি ঘটতে দেখা যায়।
এদিকে সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জ জেলায় বড় বড় চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটে এমন অপ্রিতিকর ঘটনার পিছনে মানুষের অবহেলার কারণ বলে ধারণা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্যমতে, বিভিন্ন সময় এ জেলার মানুষ নিজে বড় বড় টাকা বহন করে, পুলিশের সহায়তা ছাড়া এমন বড় অংকের টাকা বহন করা ঝুঁকির ব্যাপার। কিন্তু প্রতিনিয়তই তারা একই ভাবে এ লেনদেন গুলো করে থাকেন যার কারণে দুস্কৃতিকারীরা তাদের সোর্সকে কাজে লাগিয়ে চুরি ডাকাতি ছিনতাই ও লুটের ঘটনা ঘটায়।
বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা সিআইডি ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন শাখার একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে চুরি ডাকাতি ছিনতাই এর ঘটনা আগের তুলনায় অনেক কমছে আর এই মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাঠে থাকার কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা একেবারেই শূন্য। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ও আশেপাশের শহরগুলোতে দুস্কৃতিকারীরা বিভিন্ন ফাঁদ পাততে পারে, কারণ অপরাধীরা সবসময় নির্দিষ্ট একটি জায়গাতে থাকে না। তারা তাদের মিশন পরিবর্তন করেন, হতে পারে সম্প্রতি তারা মুন্সিগঞ্জ বেছে নিয়েছে।
জানা যায় সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জ জেলার নিমতলী হতে ৮ জুন দিন দুপুরে ব্যাংক কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে মারধর করে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা ছিনতাই করে দুস্কৃতিকারীরা। এজেন্ট ব্যাংকের মার্কেটিং অফিসার বাবু লস্কর ইসলামী ব্যাংক নিমতলী শাখা হতে এ টাকা উত্তোলন করে অটোরিকশা যোগে সিরাজদিখান এজেন্ট ব্যাংক শাখার উদ্দেশ্যে রওনা হন। উপজেলার গ্রামীণব্যাংক নামক স্থানে একটি মাইক্রোবাস এসে বাবু লস্করের অটো রিস্কার গতিরোধ করে ওই মার্কেটিং অফিসারকে তাদের প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নেয়। এরপর প্রাইভেটকারের ভিতরে অস্ত্রের মুখে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বন্ধ করে তাকে অনেক মারধর করে ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে বাবু লস্করকে গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় চক্রটি।
ওই ঘটনায় এজেন্ট ব্যাংকিং মালিক মোশারফ হোসেন চঞ্চলের ৩০ বছরের বিশ্বস্ত কর্মী বাবু লস্করকে ভুল বুঝতে শুরু করেছে পুলিশ। এ ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশ বাবু লস্করকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় নিয়ে প্রচুর মারধর করে। এতে বাবু লস্কর প্রচুর অসুস্থ হয়ে পড়েন থানা পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কেটিং অফিসার বাবু লস্কর বলেন, আমি আমার মামার সঙ্গে ৩০ বছরেরও অধিক সময় পার করেছি। অনেক টাকা-পয়সার লেনদেন করেছি সেখানে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা খুব কম টাকা। গোপনে এর চেয়ে অনেক বড় বড় লেনদেন করেছি। আমার কাছ থেকে টাকা ছিনতাই হয়ে গেল এটা আমার কপালের দোষ।
থানা পুলিশ আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মারধর করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাবু লস্কর বলেন, পুলিশ পুলিশের তদন্ত করছে এতে যদি পুলিশের তদন্ত সুষ্ঠু হয় টাকাগুলি পাওয়া যায় বা উদ্ধার হয় তাহলে চোরের অপবাদ থেকে তো অন্তত মুক্তি পাবো। পুলিশ আমাকে সন্দেহ করে যা কিছুই জানতে চাইবে না কেন এতে আমার কোন সমস্যা নাই। আমি যে এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারিনা এটা আমার পরিবার আত্মীয় স্বজন ও আমার মামা (এজেন্ট ব্যাংকিং মালিক) জানেন।
তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে টাকা গুলি উদ্ধার হলেই বাঁচি। আমি খুব অসুস্থ আমার শরীরের হাড় মাংসে প্রচুর ব্যথা এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি না। আমি কতটা অসুস্থ আপনি আমার বাসায় এলে দেখতে পারবেন। বিষয়টি পুলিশ আমলে নিয়ে কাজ করছে আমি যে তথ্য দিয়েছি তিনারা সেই তথ্য অনুযায়ী অনেক দূর এগিয়েছেন। আমাকে যে লোকটি ফলো করছিলো সে লোকটির বর্ণনা দিয়েছি। আমি দীর্ঘ অনেকদিন বিদেশ ছিলাম সেখানে সততার সহিত কাজ করেছি। এমন ঘটনা যে আমাদের নিজের এলাকায় ঘটবে তা আমি কখনো কল্পনা করতে পারি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মোশাররফ হোসেন চঞ্চল বলেন, এমন চুরি ডাকাতির ঘটনা আমাদের মুন্সীগঞ্জে প্রায় ঘটে। বিশেষ করে নিমতলীতে বেশি ঘটে। পুলিশ প্রাথমিক ইনভেস্টিগেশনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যার কাছ থেকে টাকা ছিনতাই হয়েছে সে আমার ভাগিনা দীর্ঘ অনেক বছর ধরে সে আমার কাজ করে। জীবনে কখনো দুর্দিনে আমার টাকা পয়সা বা অন্যান্য জিনিস তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, সে আমার খুবই বিশ্বস্ত। আমি বিশ্বাস করিনা যে এই ঘটনার সঙ্গে আমার ভাগিনা জড়িত থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ও একটু সহজ সরল কথাবার্তা গুছিয়ে বলতে পারে না। এজন্য হয়তো পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমার নিজ জিম্মায় আমার দুই ভাগিনা বাবু লস্কর ও নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন এই বিষয়ে, আমি নিজে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছি পুলিশ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আমার টাকাগুলো উদ্ধার হবে।
রাজধানীর শাহজাহানপুরে বসবাসরত নিমতলী ও সিরাজদিখান এলাকার একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মোশারফ হোসেনের এই টাকা ছিনতাই হওয়ার আগ মুহূর্তে জামাত-শিবিরের রাজনীতি করায় এবং শাজাহানপুর জোনের জামায়াত ইসলামী আমির হাওয়াই তিনি বেশ কিছুদিন ধরে জেলে ছিলেন। জেল থেকে বের হওয়ার দু-একদিনের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে।
আপনার ব্যবসায়ী কোন পার্টনার আছে কি না, তাদের সঙ্গে কোন শত্রু আছে কি না, তারা এমন ঘটনা কি ঘটাতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন চঞ্চল বলেন, না আমার কোন র্পাটনার নাই। তারা এমন ঘটনা ঘটাতে পারে কি না জানিনা বিষয়টি পুলিশ দেখছে। একটি সূত্র মতে জানা যায় তার এ ব্যাংকের সঙ্গে একজন র্পাটনার ও রয়েছেন কিন্তু তিনি তা অশিকার করেছেন।
জানা যায়, জামায়াত ইসলামী পক্ষ থেকে অনেকবার তিনি জেল খেটেছেন এর আগে জামায়াতের পক্ষ থেকে তিনি শাহাজানপুর এলাকা থেকে নির্বাচন ও করতে চেয়েছেন সেখানে বিএনপির শক্তিশালী র্প্রাথী থাকায় তার নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। তার এলাকারবাসির মনে করেন ঢাকা বা এলাকার রাজনৈতিকসহ ব্যবসায়ীক শত্রুরা এমন ঘটনার সাথে যুক্ত হতে পারেন আবার না ও পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক শাখার কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাবু লস্কর অনেকদিন ধরে এ ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করেন ব্যাংক কর্মকর্তারাও তাকে খুব বিশ্বাস করেন। সহজ সরল বাবু লস্কর ও নিজের মনে করে তার মনের সব কথা তাদের খুলে বলেন।
ব্যাংক ও পুলিশের সূত্র নিশ্চিত করে বলেন, বাবু লস্কর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে ব্যাংকের আশেপাশে থেকেই একটি লাল কাপড় পরিহিত লোক তাকে ফলো করছিলো। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকে সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের পক্ষ থেকে চাওয়া হলে তারা জানান সিসিটিভি ক্যামেরা ওপেন থাকে কিন্তু রেকর্ড হয় না কয়েকদিন ধরে এই সমস্যা।
ইনভেস্টিগেশন সূত্র মতে, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবু লস্কর যে তথ্য দিয়েছে এবং পুলিশ তার কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছে সেই তথ্যর প্রেক্ষিতে পুলিশ এ চক্রটির ধরার জন্য তৎপর রয়েছেন।
ইসলামি ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড না হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষর কিছু সন্দেহ এড়িয়ে যেতে পারেন না বলে মনে করেন গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ আবু হানিফ বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে এজেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ করা হয়েছিলো সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মালিক একটি মামলা দায়ের করেছেন। সে মামলা আমাদের অফিসার ইনভেস্টিগেশন করছেন এবং আমার উপরের এসি স্যার শুরু থেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ বিষয়টি দেখছেন। আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যে এ চক্রটি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।
মার্কেটিং অফিসার বাবু লস্করের তথ্যমতে পুলিশ কতটুকু এগিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাবু লস্করের কথাবার্তা প্রথমে একটু এলোমেলো হাওয়ায় আমরা তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করি তবে জিজ্ঞাসাবাদে পর আমরা অনেকদূর গিয়েছি। আমি ওই দিনেই মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি যার কারণে শারীরিক ভাবে আমি খুব অসুস্থ। মামলা তদন্ত চলছে ঘটনায় জড়িতদের খুব শীঘ্রই গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ কমিশনার (জোন) রাজিবুল ইসলাম বলেন, মুন্সীগঞ্জের মানুষেরা প্রায় সকলেই ব্যবসায়ী অথবা কারো পরিবারের বেশ কয়েকজন বিদেশ থাকে মোটামুটি তাদের কাছে নগদ অর্থ থাকে। আমরা বারবার বলে এসেছি নগদ অর্থ নিয়ে চলাফেরার সময় পুলিশের সহযোগিতা নিতে কিন্তু তারা ব্যতিক্রম। তারা যদি পুলিশের এই কথাটি মেনে চলতো তাহলে মুন্সীগঞ্জে চুরি ডাকাতির ঘটনা কম ঘটতো। কারণ আপনি জানেন বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় মানবকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতা বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ। শুধু করোনা ভাইরাস নয় প্রতিটা সংকটে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে সে সাথে মুন্সিগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন অপরাধ দমনে জেলা পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। মানুষের জানমাল নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা ছিনতাই এ বিষয়ে আমি শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছি অনেক কিছু মামলার ইনভেস্টিগেশনের জন্য বলা সম্ভব না। তবে এতটুকু বলব অনেক দূর গিয়েছি খুব তাড়াতাড়ি চক্রবর্তী গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।
এজেন্ট ব্যাংকের মালিক চঞ্চল সাহেবের ভাগিনা মার্কেটিং অফিসার বাবু লস্কর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় কিন্তু তার পরেও পুলিশ তার ভাগিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করেছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সাধারণত চুরি-ডাকাতি ছিনতাই এ ক্ষেত্রে আপন জনেরাই জড়িত থাকে অনেক সময় কাজের বুয়া বা সংশ্লিষ্ট অনেকেই জড়িত থাকে সেক্ষেত্রে আমরা পুলিশের ইনভেস্টিগেশন সুবিধার জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। তবে তার দেওয়া তথ্য কিছুটা গড়মিল থাকায় সে সন্দেহের তালিকায় ছিলো। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য মতে আমরা অনেক দূরে গিয়েছি। যদি ইসলামী ব্যাংকের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজটা রেকর্ড হতো তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এ চক্রটি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হতো পুলিশ। তারপরও আমরা অনেক দূরে গিয়েছি আমাদের অফিসার কাজ করছে খুব তাড়াতাড়ি তাদেরকে গ্রেফতার করব আশা করি।
বড় বড় ধরনের চুরি ডাকাতির ঘটনা মুন্সীগঞ্জে ঘটে কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মুন্সীগঞ্জে আগেও অনেক ধরনের চুরি ডাকাতি ঘটনা ঘটেছে তার তুলনায় মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে এমন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা অনেক কমছে। তার পরেও কিছু কিছু সময় কিছু কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের মানুষ ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে তারা নগদ অর্থ নিয়ে চলাফেরা করে প্রতি বৃহস্পতিবার তারা ব্যবসা বাণিজ্যের শেষে নিজ জেলায় প্রবেশ করে তাদের কাছে নগদ অর্থ থাকে এই কারণে দুস্কৃতিকারীরা তাদেরকে টার্গেট করে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। চুরি ডাকাতি ছিনতাই সহ অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ন্ত্রণে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যে সব কিছূ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ।
এই বিষয়ে পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন জানান, ডাকাতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে, জেলার সব চেকপোস্টগুলো সর্তক অবস্থানে রয়েছে। যে কোন সময়ে দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে ১ জুন মুন্সীগঞ্জ শহরের মধ্য কোর্টগাঁওয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আনিস-উজ-জামান আনিসের বাসভবনে ডাকাতি হয়। ৭-৮ জনের ডাকাত দল দিবাগত রাত ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ওই বাড়িতে ডাকাতি করে। এ সময় তারা পরিবারের সদস্যদের মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আসবাবপত্রসহ ১০০ ভরি স্বর্ণ ও ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের মতে, রাত ২টার দিকে ডাকাত দলের একজন প্রথমে ভবনের দ্বিতীয় তলায় পশ্চিম পাশের জানালা দিয়ে কোনোভাবে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে ভেতরে ঢোকা ডাকাত ওই দরজা খুলে দিলে আরও ৭-৮ জন ডাকাত প্রবেশ করে। দ্বিতীয় তলায় চেয়ারম্যানের বড় ছেলে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান রাজীবের ঘরে প্রবেশ করে তাকে মারধর করে বেঁধে ফেলে।
তার কক্ষে লুটপাটের পর অস্ত্রের মুখে ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ছোট ভাই জেলা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের সভাপতি জালাল উদ্দিন রুমী রাজনের ঘরে যায়। রাজীবকে দিয়েই অস্ত্রের মুখে মেয়ের অসুস্থতার কথা বলে কৌশলে রাজনের দরজা খোলায়। দরজা খুলতেই রাজনকেও মারধর করে অস্ত্রর মুখে বেঁধে ফেলে। পরে লুটপাট করে। এর পর আসে নিচতলায় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ কমিটির নির্বাচিত কমান্ডার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিস-উজ-জামানের কক্ষে। সেখানেও রাজীবকে দিয়ে মেয়ের অসুস্থতার কথা বলে দরজা খোলায়। কক্ষে প্রবেশ করে ডাকাত দল তাকেও আঘাত করে।
পরে চাবি নিয়ে লুটপাট চালায়। এ সময় আনিস-উজ-জামানের স্ত্রী আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন। তবে তার দুই ছেলে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়িতেই ছিলেন। পরে ভোর ৪টার দিকে ডাকাতরা ৫ লাখ টাকা ও ১০০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়।
উপজেলা চেয়ারম্যান আনিস-উজ-জামানের ছোট ছেলে জালাল উদ্দিন রুমী রাজন জানান, ডাকাতদের ভাষা ছিল ফরিদপুর-শরীয়তপুর এলাকার। ডাকাতরা স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে ডাকাতি করেছে, হয়তো তাদের সঙ্গেই আত্মগোপন করে আছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিলে ডাকাতদের ধরা সম্ভব হবে। ডাকাতি করে তারা পশ্চিম দিক দিয়ে দেওভোগের দিকে চলে গেছে। তারা এখনও এ এলাকাতেই রয়েছে বলে তার দাবি।
মাঝে মাঝে গণমাধমে দেখা গেছে মুন্সিগঞ্জে বন্দুক যুদ্ধে ডাকাত দলের সদস্যরা নিহত হয়েছে এরপর ও থেমে নেই চুরি ডাকাতি, মাঝে মাঝে এমন বড় ধরনের ঘটনা ও ঘটছে।
তাছাড়া ২১ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের ৫ উপজেলায় রাতে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ডকাতে আলোচনা সমালোনা এই এলাকায় নতুন নয়।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের সাধারণ মানুষের দাবি চুরি ছিনতায় ডাকাতির হাত থেকে তারা বাঁচতে চাই। এজন্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগিতার দাবি করেন তারা।
ভোরের কাগজ/এমকেসি