মিরপুর বিআরটিএতে নামধারী যুবদল নেতা দুলালের দাপট ও চাঁদাবাজি! কর্মকর্তারা আতঙ্কে!

নিজস্ব প্রতিবেদক/ মাহাদী : মিরপুর বিআরটিএ অফিসে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় দালাল চক্রের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন একজন বহুল আলোচিত ব্যক্তি। তার নাম মোহাম্মদ দুলাল ওরফে খাটো দুলাল। সবাই তাকে বিআরটিএ’র দুলাল এক নামেই চেনেন। সে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আওয়ামী লীগের সময় যুবলীগের পরিচয় দিয়ে বিআরটিএ’তে আধিপত্য বিস্তার করতো। ৫ আগষ্টে হাসিনা সরকার পতনের পর ঘোল পাল্টিয়ে যুবদল কখনো উত্তর যুবদলের নেতা, কখনোই বা কাফরুল অখবা মিরপুর এলাকার স্থানীয় যুবদল নেতা এবং বিএনপির বড় বড় নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেকে উপস্থাপনা করেন। এবং সে নিজেও যুবদলের নেতা হিসেবে বিভিন্ন মহলে পরিচয় দেন।
মিরপুর বিআরটিএ’র একাধিক কর্মকতা ও আনসার সদস্যরা ভোরের পাতাকে জানান, দুলাল মূলত বিআরটিএ’র সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে ভোগান্তি ছাড়াই কাজ করার অঙ্গীকার দিয়ে চিটিং করে মানুষ ঠকান। একাধিকবার দুলালের এমন কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে ছিল। যুদিও দুলাল নিজেকে যুবদল নেতা বা নেতার লোক হিসেবে পরিচয় দিলেও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদল বলছে, এমন নামের কোনো নেতাকর্মী তারা চেনেন না। যুদি কেউ দলের নাম বিক্রি করে তাহলে তাকে ধরে সরকারী বাহিনীর কাছে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে যুবদল।
দালালদের গডফাদার হিসেবে পরিচিত কে এই যুবদল নেতা দুলাল?
দুলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সে নিজেকে কাফরুল থানার যুবদলের সভাপতি রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে দাপটের সঙ্গে সরকারি অফিসে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিআরটিএর আধিপত্য নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সে নিজেই দালালদের গডফাদার হিসেবে পরিচিত এবং দালালদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই দালাল দুলাল। ফিটনেস শাখাসহ বিআরটিএ’র এমন কোন বিভাগ নেই, যে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।
তথ্য মতে, দালাল দালালির মাধ্য সিএনজি অটো রিক্সা সহ সব ধরনের যানবাহনের কাজ করে থাকেন। বিশেষ করে ফিটনেস শাখার ১২৭ নম্বর কক্ষে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি সময়ের বাইরেও সিল মারার কাজ করে চলছেন এই নামধারী যুবদল নেতা দুলাল।
একটি বিশেষ সূত্র জানায়, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন, সহকারী মোটরযান পরিদর্শক সিফাত ও মোটরযান পরিদর্শক রনজিতের ছত্রছায়ায় চলছে এসব অপকর্ম। যদিও এসব বিষয়ে অভিযুক্তরা তেমন কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দুলাল প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ফিটনেস সেবা সংক্রান্ত দালালি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরাসরি অফিস রুমে প্রবেশ করে ফাইল আদান-প্রদান এবং সিল সংগ্রহ করলেও কোনো কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না। বরং কেউ প্রতিবাদ করলে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগও কম নয় দুলালের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি বেশ কিছু সাংবাদিক দালাল চক্রের মূল হোতা দুলালের অপকর্মের প্রমাণ সংগ্রহ করতে গেলে তাদেরও সে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। অথচ, বিএনপির সাংগঠনিক ভাবে বলছে। দল কখনোই এ ধরনের অপকর্ম সমর্থন করে না এবং কেউ দলের নাম ভাঙিয়ে দালালি করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এবং জনগণ তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে পারবে।
এ বিষয়টি নিয়ে কাফরুল থানা যুবদলের সভাপতি রাজ্জাক নিজেও অজ্ঞাত ছিলেন। পরে জানিয়েছেন, দুলাল নমে কাউকে তেমন চিনি না। যদি সে আমার নাম ব্যবহার করে বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় তাহলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
বিএনপি’র ও যুবদলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, বিআরটিএ’র দালাল, দুলাল বর্তমানে কোন দলের সাথে জড়িত নয়। সে যদি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করতে যায় তাহলে তাকে প্রশাসনিক লোকজনের কাছে সোপর্দ করা ভালো। তবে প্রশ্ন হচ্ছে– দুলালের মতো ব্যক্তি কিভাবে বছরের পর বছর এমন দাপটের সাথে বিআরটি ‘তে দালালি করছে। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ কার ছত্রছায়াই সে এসব করে যাচ্ছেন? বিআরটিএ কর্মকর্তারা কেন মুখ বন্ধ করে আছেন?
এদিকে এ বিষয়ে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বিআরটিএ’র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ভোরের পাতাকে জানান, যুবদলের নামধারী নেতা দালাল হিসেবে পরিচিত চিটিং দুলাল কে নিয়ে আমরা অনেক আতঙ্কিত রয়েছি। তার বিরুদ্ধে কোন কিছুই বলা যায় না, অনেকেই তাকে ভয় পাচ্ছেন। যার কারণে বিআরটিএ‘তে কাজ করতে কিছুটা সমস্যাও হচ্ছে।
তবে, বিআরটিএ’র সংশ্লিষ্ট্ররা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব মুক্তি হলেই, দুলালের মতো এমন চক্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের শরীফ উদ্দিন জুয়েলকে আহ্বায়ক ভোরের পাতাকে জানান, দুলালকে ধরে পুলিশের দিয়ে দেওয়া হোক উত্তর যুবদল বিআরটিএ ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করবে। দলের মধ্যে কোনো চাঁদাবাজদের জায়গা নেই কেউ দিলেও তাদের পদ পদবি থাকবে না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ ভোরের পাতাকে জানান, দুলাল নামের কাউকে আমরা চিনি না। কেউ দলের নাম বিক্রি করলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ রইলো। যুবদল কোনো ভাবেই এসব অপরাধে যুক্ত হবে না। কেউ যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের পাতা/টিআই