বিশ্ববাণিজ্যে জোরদার হচ্ছে চীনের প্রভাব

সময়: 6:31 am - October 14, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 71 বার
বিশ্ববাণিজ্যে জোরদার হচ্ছে চীনের প্রভাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যে চীন থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস, সেই চীনই সবার আগে মহামারি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিহীনতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ তাদেরকে দায়ী করছে। অথচ সেই চীনই অর্থনীতির চাকা সচল করায় অন্যদের পেছনে ফেলেছে। দিন যত যাচ্ছে, বিশ্ববাণিজ্যে চীনের প্রভাব ততই বিস্তৃত ও সুসংহত হচ্ছে।

বিশ্ববাণিজ্যে চীনের অংশীদারিত্ব অবশ্য আগে থেকেই সম্প্রসারণের পথে রয়েছে। তবে করোনা মহামারি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বেইজিংয়ের আধিপত্য কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তার উল্টোটা।

চীনের শুল্ক প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ডলার টার্মে দেশটির রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। এ নিয়ে টানা চার মাস রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করল এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি।

এছাড়া যে করোনার কারণে অর্থনীতিতে ধস নেমেছিল, সেই করোনাই চীনের রফতানি বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। মহামারি মোকাবেলায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) কিংবা ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম প্রযুক্তির বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে যায়। চীন এই বর্ধিত বাজারের সুবিধা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনে দ্রুত তারা শিল্প-কারখানা খুলে দিয়েছে।

বিভিন্ন দেশে পিপিই, শিল্প খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য রফতানির মাধ্যমে তারা বৈদেশিক বাণিজ্যে গতি এনেছে, যার ফল হিসেবে টানা চার মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি দেখল তারা। অথচ চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের রফতানি কমেছিল ১৭ দশমিক ১ শতাংশ।

রফতানির পাশাপাশি সেপ্টেম্বরে চীনের আমদানিও ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। সার্বিকভাবে গত মাসে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, সেপ্টেম্বরে চীনের রফতানি ১০ শতাংশ ও আমদানি দশমিক ৪ শতাংশ বাড়তে পারে।

চীনা কমার্সব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ঝৌ হাও বলেছেন, ‘চীনের আমদানি বৃদ্ধির বিষয়টি এটাই নির্দেশ করে যে সেখানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া এর মাধ্যমে এটাও প্রতীয়মান হয় যে দীর্ঘদিন স্থবির থাকার পর বিশ্ব অর্থনীতি ফের সচল হতে শুরু করেছে।’

তবে চীনের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় প্রযুক্তি খাতের বড় ভূমিকা রয়েছে। তাইওয়ান থেকে চীনের প্রযুক্তি পণ্যের আমদানি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৪ ও ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর মাধ্যমে এশিয়ার টেক সাপ্লাই চেইনের কার্যক্রমে গতি ফিরে আসার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে বিশ্ববাণিজ্যের ঝাণ্ডা এখন চীনের হাতে। তবে তাদের এই নেতৃত্ব কি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে? ব্লুমবার্গের বিশ্লেষক বলছেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী মাসগুলোয় চীনের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে আমরা এটাও মনে করছি যে সামনের দিনগুলোয় প্রতিকূল পরিবেশও আরো জোরালো হবে। ইউরোপে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্কে অবনতির কারণে বেইজিংকে ভবিষ্যতে বেশ কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে।’

এদিকে রফতানির পাশাপাশি সামনের দিনগুলোয় চীনের আমদানিও বাড়তে থাকবে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। আর এমনটি হলে বিশ্ববাণিজ্যে চীনের প্রভাব আরো সুসংহত হবে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। খবর ব্লুমবার্গ।

এই বিভাগের আরও খবর