অনলাইনে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা নেই, বিপাকে তিতাস
ঢাকা: বিদ্যুৎ ও ওয়াসার পানির বিল ঘরে বসে অনলাইনে পরিশোধ করার সুবিধা রয়েছে বহুদিন ধরেই। ফলে ব্যাংকে দীর্ঘ লাইন ধরার কষ্ট থেকে গ্রাহকদের রেহাই মিলেছে। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা এত বছরেও করেনি সরকারের বৃহত্তর গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস। গ্যাসের বিল অনলাইনে দেওয়ার সুবিধা না থাকায় করোনাকালে ব্যাপক সংকটে পড়েছে কোম্পানিটি।
সূত্র জানায়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সাধারণ সময়ে প্রতিমাসে গড়ে ১৪শ কোটি টাকা গ্যাস বিল আদায় করে। করোনাকালে আদায় হয়েছে এর মাত্র ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ অনলাইনে বিল দেওয়ার সুবিধা না থাকায় গ্রাহকরা করোনাকালে বিল দিতে ব্যাংকে যাননি। ফলে গড়ে ৭০ শতাংশ গ্রাহকের বিল আদায় করা সম্ভব হয়নি। এতে আর্থিক সংকটে পড়েছে তিতাস। তাদের নিয়মিত বিদেশ থেকে আনা এলএনজির (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) বিল পরিশোধ করতে হয়েছে কোম্পানির এফডিআর ভেঙে। এখন কোম্পানিটি উদ্যোগ নিয়েছে প্রায় ৯ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ২৮ লাখ চুলার বিল অনলাইনে আদায় করার।
ইতোমধ্যে তিতাস তিনটি মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ, বিকাশ ও রকেটের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে। সম্প্রতি কোম্পানি পরিচালক (অর্থ) এএসএম জিয়াউল হকে নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কোম্পানিকে শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আল-মামুন বলেন, অনলাইনে গ্রাহকদের বিল দেওয়ার প্রক্রিয়াটা আরো আগেই করার দরকার ছিল। এতদিন কেন অন্যরা সেই উদ্যোগটি নেননি সেটি ভেবে আমিও অবাক হই। যদি অনলাইনে গ্রাহকরা গ্যাস বিল দিতে পারতেন তা হলে এই করোনাকালে ধারণা করছি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিল আদায় হয়ে যেত। তিনি বলেন, যাই হোক এখন আমরা সেই উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত অনলাইনে গ্রাহকের বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করতে পারব।
তিতাস দেশের বৃহত্তর গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। দেশে যা গ্যাস ব্যবহৃত হয় তার বেশির ভাগ গ্যাস তিতাস গ্যাস কোম্পানির আওতাধীন গ্রাহকরা ব্যবহার করেন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকায় তিতাস গ্যাস সরবরাহ করে। তিতাসের আওতাধীন ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দুটি সার কারখানার গ্রাহকসহ সাড়ে ৯ হাজার শিল্প বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে। আট লাখ গ্রাহকের অধীনে প্রায় ২৫ লাখ ২৫ হাজার আবাসিক চুলার মিটারবিহীন গ্রাহক রয়েছে। দুই লাখের মতো মিটারযুক্ত গ্রাহক রয়েছে। কেবল দুই লাখ মিটারযুক্ত গ্রাহক ছাড়া সব গ্রাহককে ব্যাংকে গিয়ে বিল পরিশোধ করতে হয়। যেখানে বিদ্যুতের প্রায় চার কোটি গ্রাহকেরই সুবিধা রয়েছে ঘরে বসে মোবাইল ফোনে বিল পরিশোধ করার।
তিতাসের পরিচালক (অর্থ) এএসএম জিয়াউল হক বলেন, আমরা বেশ কিছুদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে নগদ, রকেট এবং বিকাশের সঙ্গে কথা বলেছি। আবাসিক গ্রাহকের সঙ্গে শিল্প গ্রাহকরাও অনলাইনে বিল পরিশোধ করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্বিক অবস্থায় মনে হচ্ছে অনলাইনে কেবল বিল দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে আবাসিক নন-মিটার গ্রাহকদের। রকেট, বিকাশ বা নগদের লেনদেনের টাকার পরিমাণের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, বিকাশ একদিনে ২৫ হাজার টাকার বেশি লেনদেন করতে পারে না। ফলে যেসব শিল্প গ্রাহকের বিল আসে অনেক টাকা তাদের ব্যাংকে গিয়ে বিল পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া শিল্প গ্রাহকদের বিল পরিশোধ করার ক্ষেত্রে ট্যাক্সসহ নানা বিষয় আছে। ফলে তাদের মোবাইলে অনলাইনে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপাতত আট লাখ গ্রাহককেই মোবাইলে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা যাবে। রকেট, বিকাশ বা নগদের চার্জের বিষয়টি কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু তিনটি আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান ফলে আমরা চেষ্টা করব চার্জ যাতে প্রতিযোগিতামূলক কারণে কম হয় এবং সেটি যতটা কম করা যায় সেই চেষ্টা করছি।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, শুধু বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেই যে তিতাস পিছিয়ে রয়েছে তা নয়, অনলাইনে ফাইল চালাচালি বা ই-ফাইলিং কার্যক্রমেও তিতাস পিছিয়ে আছে। এখনো বিভিন্ন জোন থেকে ফাইল হাতে করে বিভিন্ন ঠিকাদার বা কর্মকর্তারা প্রধান শাখায় আনা নেওয়া করেন। তিতাসে ই-ফাইলিং কার্যক্রমের গতিও খুবই সামান্য। কিছু নিয়মিত চিঠিপত্র ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ফাইলিংয়ের ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং কার্যক্রম চালু করতে পারেনি তিতাস।