সৌদি যেতে লাগবে স্মার্ট ফোন, শর্ত না মানলে জরিমানা
সৌদি আরব: আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করার পর বাংলাদেশিদের সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভিসার মেয়াদ, ফ্লাইট সংকট থাকায় কিছুটা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে প্রবাসীদের। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স বিশেষ ফ্লাইটের পাশাপাশি নিয়মিত ফ্লাইটে যাত্রী নেওয়া শুরু করেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও প্রবাসীদের সৌদিতে ফেরাতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে। তবে, করোনা মহামারির মধ্যে সৌদিতে ফিরতে প্রবাসীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধিসহ কিছু শর্ত।
প্রত্যেককে অবশ্যই সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন মোবাইলে ইনস্টল করতে হবে, যার জন্য লাগবে স্মার্ট ফোন। এ কারণে স্মার্ট ফোন ছাড়া সৌদিতে গেলে পড়তে হবে বিপত্তিতে, হতে পারে বড় অংকের জরিমানা।
বেশিরভাগ সৌদি প্রবাসী ৩০ সেপ্টেম্বর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থাকায় উৎকণ্ঠায় ছিলেন। তবে সৌদি আরব যেসব বাংলাদেশি কাজ পেয়েছেন তাদের ইকামার মেয়াদ ২৪ দিন বাড়িয়েছে। ফলে সৌদিতে ফেরার জন্য আরো সময় পেলেন প্রবাসীরা। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম এক ফেসবুক বার্তায় জানান, ‘ইকামার মেয়াদ আরবি সফর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত (মানে আজ বুধবার ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আরো ২৪ দিন) বর্ধিত করা হয়েছে। ঢাকায় সৌদি আরব দূতাবাসের ভিসা অফিস রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে খোলা থাকবে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নতুন নিয়মাবলি মেনে কনস্যুলার সেবা প্রদান করা হবে।’
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আটকে পড়া সৌদি প্রবাসীদের জন্য দুই বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন জানান, ১৬ ও ১৭ মার্চের জেদ্দা ও রিয়াদের বিমানের রিটার্ন টিকিটধারী যাত্রীদের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা-জেদ্দা ও ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা-রিয়াদে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করবে। ১৬ ও ১৭ মার্চের ফিরতি টিকিটধারী যাত্রীদের এই ফ্লাইটে বুকিংয়ের জন্য বিমান সেলস অফিসে টিকিট, পাসপোর্ট, সৌদি আরব নির্ধারিত অ্যাপস/ লিংক থেকে অনুমোদন ইত্যাদিসহ ২৪ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করতে হবে। অন্য যাত্রীদের এখনই অযথা কাউন্টারে ভিড় না করতে অনুরোধ করেছে বিমান।
বিমান, সাউদিয়া ও সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সৌদি আরবে যেতে প্রবাসীদের কিছু শর্ত অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। সাউদিয়া ও বিমান ঢাকা থেকে জেদ্দা এবং রিয়াদে যাত্রী পরিবহন করবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীদের ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটে যেতে হবে। সৌদির নিয়ম অনুসারে বৈধ ভিসাধারী যাত্রীরা (বহির্গমন/ প্রবেশ/ আবাস/ ইকামাহ এবং ভ্রমণ) সৌদি আরবের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
যাত্রীদের তাদের “আবশার” (“Absher”) অ্যাকাউন্ট থেকে ভিসার বৈধতা যাচাই করতে পারবেন। “আবশার” (“Absher”) প্ল্যাটফর্মের লিংক https://www.absher.sa/portal/landing.html
লাগবে স্মার্ট ফোন
বিমানের ফ্লাইট ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে যাত্রীদের স্মার্ট ফোনসহ বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে হবে। যাত্রীদের অবশ্যই সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিসক্লেইমার ফরমে (অনুচ্ছেদ-২) উল্লেখিত “Tataman and Tawakkalna Apps’’ ডাউনলোড করতে হবে। যার লিংকগুলো হচ্ছে, Tawakkalna- https://play.google.com/store/apps/details…
ও Tataman- https://www.moh.gov.sa/en/eServices/Pages/Rest-assured.aspx
সব যাত্রীদের সৌদি আরবে পৌঁছানোর ৮ ঘণ্টার মধ্যে Tataman app-এর মাধ্যমে তাদের আবাসস্থলের অবস্থান জানাতে হবে। সৌদিতে পৌঁছানোর পর ৭ দিন নিজের বাসায় সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সকল যাত্রীকে কোভিড-১৯-এর উপসর্গগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। কোনও উপসর্গ দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ৯৩৭-এ কল করতে হবে। প্রয়োজনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র যেতে হবে। Tataman app-এ যাত্রীদের অবশ্যই প্রতিদিনের স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করতে হবে।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট
এদিকে যাত্রীদের বোর্ড কার্ড পেতে আরো কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে, যা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত পরীক্ষাগার থেকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে, যা কোনোভাবেই সৌদি আরবে পৌঁছানোর আগে ৪৮ ঘণ্টার বেশি না হয়। যাত্রীদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ টেস্ট ফলাফলের ৬টি কপি সঙ্গে রাখতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার সময় গণনা শুরু হবে নমুনা সংগ্রহের সময় থেকে। যাত্রীদের সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ন্ত্রণ এবং পদক্ষেপগুলো মেনে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে হবে। বিমানে বোর্ডিংয়ের পূর্বে যাত্রীদের অবশ্যই সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিসক্লেইমার ফরম পূরণ এবং স্বাক্ষর করতে হবে এবং সৌদি বিমানবন্দরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে পূরণকৃত ও স্বাক্ষরকৃত ফরমটি জমা দিতে হবে। নির্দেশাবলি অমান্য করার ফলে সিভিল এভিয়েশন আইনের ১৬৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিশাল জরিমানা আরোপিত হবে। নিজ গৃহে সেলফ কোয়ারেন্টিন থাকার সময় যাত্রীদের অবশ্যই সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিসক্লেইমার ফরমে উল্লেখিত পূর্ব সতর্কতামূলক পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে হবে।