বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার চুরি; নাগালের বাইরে মূল হোতা!
বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে ৪৯টি কম্পিউটার চুরি হওয়ার ঘটনায় তন্মধ্যে ৩৪টি কম্পিউটার গত ১৩ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর বনানীর `হোটেল ক্রিস্টাল-ইন’ নামক একটি হোটেল থেকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জের মেরি গোপীনাথপুর গ্রামের বিল্লাল শরীফের ছেলে মাসরুল ইসলাম পনি শরীফ (২৩), হোটেল ক্রিস্টাল ইন- এর ম্যানেজার কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার ইদ্রাকচরের মৃত সেলিম মিয়ার ছেলে মু. দুলাল মিয়া (৪৫), হোটেল ক্রিস্টাল ইন- এর হোটেলবয় ময়মনসিংহ জেলার কোতয়ালী থানার চোরখাই গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ হুমায়ুন কবির (২৪), গোপালগঞ্জের বরফা মধ্যপাড়ার আইয়ুব শেখের ছেলে রহমান ওরফে শান্ত ওরফে কাকন (১৯), কামাল পাশা মিনার পুত্র নাইম উদ্দিন (১৯), বরফা শেখ পাড়া গ্রামের আবুল হোসেন শেখের ছেলে আঃ রহমান সৌরভ শেখ (১৯) এবং মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার সালাম হাওলাদারের ছেলে নাজমুল হাসান (১৯)।
পরে গ্রেফতারকৃত ওই ৭ জনের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যের ভিত্তিতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পলাশ শরীফকে তার পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
গত ১৪ আগস্ট (শুক্রবার) দিবাগত রাত সোয়া বারোটায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহেদ মাহমুদ বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মু. ফিরোজ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে কম্পিউটার চুরির ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রধান হোতা যেন এখনও রয়েছে নাগালের বাইরে!
এদিকে, কম্পিউটার চুরির ঘটনা নিয়ে চলছে নানান রদবদল। প্রথমে কম্পিউটার চুরির প্রকৃত হোতাসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের উদ্দেশে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তদন্ত কমিটিকে সকল প্রকার প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মু. নজরুল ইসলাম হিরাকে উক্ত তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে কি কারণে তাকে তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এ ধরণের প্রশ্নের উত্তরে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেন।
গত ১৮ আগস্ট (মঙ্গলবার) তাকে তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারপর এ ঘটনার দুই দিন যেতে না যেতেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ওই তদন্ত কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী এস. এম. এস্কান্দার আলী। গত ২০ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোঃ নূরউদ্দিন আহমেদ তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ নিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচে। পরবর্তীতে কমিটি থেকে ওই দুই সদস্যের শূন্য পদে আরও দুই সদস্যকে যোগ করা হয়। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা ড. শারাফাত আলী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক (পউও) তুহিন মাহমুদ।
অপরপক্ষে, তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সদস্য মু. নজরুল ইসলাম হিরার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সঙ্গে উগ্রস্বরে কথাবার্তা ও হুমকির অভিযোগে ২৬ আগস্ট (বুধবার) দুপুরে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সহকারী রেজিস্ট্রারকে (মোঃ নজরুল ইসলাম হিরাক) কম্পিউটার চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল (২৬ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে তার পক্ষে ওই কলেজের বিগত সময়ের বেশ কয়েকজন ভিপি-জিএস অংশ নেন।
সবমিলিয়ে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন দুই পক্ষই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যেমন অব্যাহতিপ্রাপ্ত ওই সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন, তদ্রুপ তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানান তিনি৷ আর এখনও কম্পিউটার চুরির ব্যাপারে প্রধান হোতা রয়ে গেছেন সকলের লোকচক্ষুর আড়ালে! তবে প্রশাসন ও পুলিশ এ ঘটনার প্রধান হোতাকে খুঁজে বের করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।