চাপে সরকার, ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১০৯ শতাংশ

সময়: 10:06 am - July 11, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 80 বার
চাপে সরকার, ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১০৯ শতাংশ

ঢাকা: গেল অর্থবছরে (২০১৯-২০) ব্যাংকিং খাত থেকে মোট ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা নিয়েছিল সরকার। ঋণের এই পরিমাণ আগের অর্থবছরের (২০১৮-১৯) চেয়ে ১০৯ শতাংশ বেশি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ে নাজুদ অবস্থা এবং সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। অর্থবছরের শেষ দিকে করোনা ভাইরাসের প্রবল আঘাত অর্থনীতির গণেশ উল্টে দিয়েছে। এ কারণেই আর্থিক সংকটে পড়ে সরকার। সেজন্যই অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় ব্যাংক ঋণ।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের মতো ঋণ সহায়তা পেয়েছে সরকার। তারপরও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছে সরকার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৩৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। ফলে দুই অর্থবছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ সাড়ে ৬ গুণ বেড়ে গেছে।

বিশেষত গত অর্থবছরের শেষ দিকে করোনা প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথ গতির কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিস্থিতি ভালো ছিল না। করোনার বিস্তারের পর থেকে অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তাতে করে ব্যাপক হারে কমতে শুরু করে রাজস্ব আদায়। গত ৪৫ বছর পর সবশেষ অর্থবছরে রাজস্ব আয় আগের বছরের চেয়ে কম হয়েছে।

গত অর্থবছরে মূল বাজেটে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৮৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কম।

এপ্রিল থেকে জুন- এই তিন মাসে বিশ্বব্যাংক ১৬০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে। এডিবি দিয়েছে ৬০ কোটি ২৮ লাখ ডলার। তবে নানা শর্তের কারণে আইএমএফের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া কিছুটা কঠিন। সেই আইএমএফের কাছ থেকেও মাত্র ১ মাসের দরকষাকষিতে ৭৩ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা মিলেছে। এছাড়া চীনের নেতৃত্বে গঠিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) গত এপ্রিলে ১৭ কোটি ডলার দিয়েছে বাংলাদেশকে।

সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা করা হয়। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রচুর ঋণ পাওয়ায় ব্যাংক থেকে তেমন ঋণ নিতে হয়নি সরকারকে।

সাধারণত ব্যাংকিং খাত থেকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সুদে ঋণ পায় সরকার। অথচ সঞ্চয়পত্রে গুণতে হয় ১১ দশমিক ০৪ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যদিও গেল কয়েক বছরে প্রচুর সঞ্চয়পত্র বিক্রির কারণে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা সুদ দিতে হচ্ছে সরকারকে। সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ স্থিতি রয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

এদিকে সুদ কমাতে সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা কমিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও টিআইএন বাধ্যতামূলক করাসহ নানা উপায়ে বিক্রি নিরুৎসাহিত করছে সরকার। নতুন বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

গেল অর্থবছরের মূল বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ হাজার কোটি টাক। তবে বিক্রি পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা করা হয়।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ পেয়েছে ১০ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর