বিদেশি শিপিং কোম্পানির ‘আধিপত্যের’ অবসান হলো

সময়: 9:27 am - June 24, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 63 বার

ঢাকা: প্রায় এক দশক পর দেশের বেসরকারি শিপিং খাত আবার ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কনটেইনারবাহী জাহাজে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রে আবারও লাল-সবুজের পতাকা উড়বে। বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সার্ভিসের যাত্রা শুরু হল সমুদ্রে পথে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের কনটেইনার পরিবহনে বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান হল। প্রায় ১৮৫ মিটার লম্বা জাহাজ সারেরা মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ত্যাগ করে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং এর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়।

কর্ণফুলী গ্রুপের তথ্য মতে, বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সার্ভিসে ‘সারেরা’ ও ‘সাহারে’ নামে দুইটি কনটেইনার জাহাজ যুক্ত হয়েছে। দুটি জাহাজই প্রতিবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৫০ টিইইউএস কনটেইনার পরিবহন করতে পারবে। সপ্তাহের প্রত্যেক সোমবার জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরে কনটেইনার পরিবহন করবে। এই দুটি বন্দর থেকে বাংলাদেশের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রামে আসবে জাহাজ দুটি। এতে দেশের আমদানি বা রফতানিকারকদের পণ্য পরিবহনে বিপুল বৈদশিক মুদ্রার ও সময় সাশ্রয় হবে।

রবিবার (২১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ হিসেবে সারেরা অগ্রাধিকার সুবিধায় এসে নোঙর করে। বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সার্ভিসের প্রথম যাত্রাতে সারেরা মঙ্গলবার (২৩ জুন) প্রায় ১ হাজার ২৫০ টিইইউএস কনটেইনার নিয়ে গেল। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ২০০ টিইইউএস ছিল খালি কনটেইনার। এছাড়া একজন ক্যাপ্টেনসহ জাহাজটিতে ২৩ জন ক্রু রয়েছে।

শিপিং খাতের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্রুপের পরিচালক হামদান হোসেন চৌধুরী ব্রেকিংনিউজকে বলেন, দেশের পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ যুক্ত করতে পারা গৌরবের। প্রতি সপ্তাহের সোমবার রপ্তানী পণ্য বোঝাই কনটেইনার নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাবে। এতে দেশের রফতানিকারকদের চট্টগ্রাম থেকে পণ্যবোঝাই কনটেইনার সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার বন্দরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজে (মাদার ভ্যাসেলে) তুলে দিতে দুঃচিন্তা করতে হবে না।

তিনি আরও বলেন, একজন ক্যাপ্টেনসহ প্রত্যেক জাহাজে ২৩ জন করে ক্রু রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন ও ক্রুরা এ মুহূর্তে জাহাজে উঠছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তারা সকলেই জাহাজে যোগ দেবেন। এছাড়া জাহাজে বর্তমানে একজন বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন রয়েছেন।

হামদান হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা চাই দেশী0য় পতাকাবাহী জাহাজ বহর বৃদ্ধি পাক। এতে দেশের সুনাম যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি কনটেইনার পরিবহন ভাড়া বাবদ বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

জানা যায়, দেশের নাম যুক্ত করে এই পরিবহন সেবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সার্ভিস’। জাহাজ দুটির নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘সাহারে’ ও ‘সারেরা’। কর্ণফুলী গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এইচআর লাইনস লিমিটেড ফিডার অপারেটর হিসেবে জাহাজ দুটি পরিচালনা করবে। দুইটি জাহাজই বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

কর্ণফুলী গ্রুপের অপর পরিচালক রাইমা চৌধুরী ব্রেকিংনিউজকে বলেন, সমস্ত পরিকল্পনা এবং জাহাজ দুইটি ক্রয়ে আমাদের তিন বছর সময় লেগেছে। জাহাজ দু্‌ইটির মাধ্যমে আরও ৪৬ জন বাংলাদেশির কর্মসংস্থানে সৃষ্টি হয়েছে।

মিস রাইমা চৌধুরী বলেন, এক সময় বাংলাদেশি পতাকাবাহী ২০টিরও বেশি জাহাজ চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর, চট্টগ্রাম-কলম্বো, চট্টগ্রাম-কলকাতা-হালদা- ভায়া মোংলা রুটে চলাচল করতো। এমনকি বাংলাদেশি জাহাজগুলি চট্টগ্রাম থেকে করাচি বন্দরেও কনটেইনার নিয়ে যেত। রাইমা চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ রুটগুলিতে ব্যবসা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হলে এদেশের শিপিং ব্যবসায় আগের ঐহিত্য ফিরে আসবে।

বন্দরের তথ্যে মতে, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও চীনের বন্দরগুলোতে বিদেশি ২২টি প্রতিষ্ঠানের (ফিডার অপারেটর) ৮৪টি জাহাজ কনটেইনার পরিবহন করছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব জাহাজ গত বছর ২৯ লাখ কনটেইনার পরিবহন করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক ব্রেকিংনিউজকে জানান, দেশীয় পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ থাকা গৌরবের। আবার জেটিতে জাহাজ বার্থ নিতে পাবে অগ্রাধিকার। বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ সংরক্ষণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী, দেশীয় জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ পরিচালনার মধ্য দিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন ব্যবসায় বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের(বিএসসি) সূত্রে জানা যায়, আগামী দুই বছরের মধ্যে যুক্ত হতে পারে চারটি কনটেইনারবাহী জাহাজ। এছাড়া ২০২১-২০২২ সাল নাগাদ আরও ছয়টি জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হবে। বর্তমানে বিএসসির বহরে আটটি জাহাজ যুক্ত রয়েছে। তবে কোনটিই কনটেইনারবাহী নয়।

বিএসসির মহা ব্যবস্থাপক(অতিরিক্ত দায়িত্ব) (চার্টারিং, অপারেশন ও পরিকল্পনা) ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান ব্রেকিংনিউজকে বলেন, বিএসসি চারটি কনটেইনার জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে। যেগুলো ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টিইইউএস কনটেইনার পরিবহন করতে সক্ষম হবে। জাহাজাগুলো বহরে যুক্ত হতে দুই বছর বা এর বেশি সময় লাগতে পারে। করোনাকালীন সময়ে এর কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর