নিজ বন্ধুকে হত্যা করে সাহেব আলী, ৪ বছর পর আনু হত্যার রহস্য উদঘাটন করে সিআইডি

সময়: 6:09 pm - June 20, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 119 বার
ইনভেস্টিগেশনের শুরু থেকে সিআইডি ছোট্ট ছোট্ট আলামত নিয়েই আনু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে

ঢাকা: ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার ভালকি গ্রামের আনেয়ার হোসেন আনু হত্যার ৪ বছর পর রহস্য উদঘাটন। এই হত্যা মামলার ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের কাছে সোপর্দ করেছে সি,আই,ডি ঝিনাইদহ শাখা।

জানা গেছে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৩ তারিখে আনোয়ার হোসেন আনু কে হাত পা বেধে জবাই করে ঐ গ্রামের ফাকা মাঠের ভিতর রেখে যাই দূর্বৃত্তরা।ঘটনার পরের দিন ০৪/০২/২০১৬ ইং তারিখে ভিকটিমের স্ত্রী মোছা: বিউটি খাতুন বাদী হয়ে হরিনাকুন্ডু থানায় সন্দিগ্ধ ও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দায়ের করে।

যার মামলা নং০৩.তাং০৪/০২/১৬। থানায় মামলা করার পরে কিছু আসামি ধৃত হলেও রহস্য উদঘাটন করতে ব্যার্থ হন থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট(FRT) দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। বিজ্ঞ আদালত পরে বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে মামলাটি পুনঃতদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিকেশন (পি,বি,আই) এর উপর। কিন্তু পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিকেশন (পি,বি,আই) তদন্ত শেষে আবার চুড়ান্ত রিপোর্ট(FRT) দাখিল করেন বিজ্ঞ আদালতের নিকট।

পরিশেষে বিজ্ঞ আদালত বাদীর নারাজীর প্রেক্ষিতে ০৫/০৯/২০১৯ তারিখে পুনঃ মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করেন সি,আই,ডি ঝিনাইদহ শাখা বরাবর। সি,আই,ডি‘র তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তদন্তভার গ্রহন করে গোপনে ও প্রকাশ্যে মামলার তদন্ত পরিচালনা করে মামলার রহস্য উদঘটন সহ মামলার ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতের নিকট সোপর্দ করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, বিজ্ঞ আদালত সি,আই,ডি বরাবর ০৫/০৯/১৯ তারিখের স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দেন। মামলা তদন্তভার পায় ১৯/১২/১৯ তারিখে। মামলার তদন্তকারে গোপনসূত্রে মামলার রহস্য জানতে পারে। মামলার সন্দিগ্ধ আসামিকে ধরার জন্য সোর্স নিয়োগ করি এবং আমি ও এস আই সেলিম রেজা অভিযান চালিয়ে গত ইং১৭/০৬/২০২০ তারিখে এই মামলার সন্দিগ্ধ আসামি সাহেব আলী কে কুষ্টিয়া জেলার ঝাউদিয়া বাজার নামক স্থান থেকে ধৃত করতে সক্ষম হই।

ধৃত আসামি সাহেব আলী হত্যার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতের নিকট ১৬৪ ধারার বিধান মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। তদন্ত অব্যহত থাকায় তথ্য গোপন রেখেছেন বলে তিনি জানান।

জানা যায়, ধৃত আসামি সাহেব আলীর বলামতে তার সহযোগি আসামিদ্বয়কে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ পরিদর্শক তোফাজ্জেল হোসেন এর নেতৃত্বে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে (১)শাহিন কবির ঝলক(৩৮),পিতা:মৃত আবুল মিয়া,(২) রাশিদুর ইসলাম (কুটি),(৪৩), পিতা: ইসলাম বিশ্বাস উভয় সাং-কিছমত ঘোড়াগাছা,থানা: হরিনাকুন্ডু,জেলা ঝিনাইদহ দ্বয়কে তাদের বসতবাড়ীর সামনে পাকা রাসআর উপর হিইতে ধৃত করতে সক্ষম হন। ধৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করিলে বিজ্ঞ আদালত আসামিগনকে জেলহাজতে প্রেরন করেছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শাহিন কবির ঝলক(৩৮),পিতা:মৃত আবুল মিয়া এর বিরুদ্ধে চাদাবাজি,বিষ্ফোরক ও হত্যা মামলা সহ বেশ কিছু মামলা আছে। এলাকাবসি আরো জানান দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সময় এলাকার মানুষের নিকট চাঁদা দাবী করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করলেও তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ পুলিশের কাছে মুখ খুলতে রাজি হন না।তবে তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কিছু বসতী ভুক্তভোগী মানুষ হরিনাকুন্ডু থানায় সাধারন ডায়েরী করেছেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার আয়ু (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, যাকে হত্যা করা হয় এরমধ্যে আসামী একজন (সাহেব আলী) ছিলো তার বন্ধু। সাহেব আলীকে দিয়ে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। আমরা শুরু থেকেই তদন্ত করছিলাম। মামলার বাদীর সন্দেহ ছিলো এই হত্যা মামলার রহস্য সাহেব আলী অনেকটা জানে। তার সন্দেহের উপর ভিত্তি করে সাহেব আলীকে তদারকিতে রেখে ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই মামলার রহস্য আমার উপরে স্যারদের জানালে তিনারা আমাকে সহযোগিতা করেন। স্যারদের সহযোগিতায় ও আমার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর সিআইডি পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা সিআইডি অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এই ঘটনাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করছে। এরপর পিবিআই এপর ২০১৯ সালে তদন্ত করে। এরপর মামলাটি সিআইডিকে দেওয়া হয়।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, এই মামলাটি শুরু থেকে আমাদের আয়তে ছিলো। মামলাটি নিয়ে সিআইডি অনেক কাজ করছে। আমরা আসামিকে তদারকিতে রেখে মামলার উদঘাটন রহস্য করি।

তিনি বলেন, এই মামলার একটি বড় আলামত ছিল যিনি মারা গেছেন তার সঙ্গে আসামির দুই মাস আগে তাদের এলাকায় বাজারের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। সিআইডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাথে মামলাটি তদন্ত করে আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা সিআইডির ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, সিআইডি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ সাথে বিভিন্ন মামলার রহস্য উদঘাটন করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ঝিনাইদহের আনোয়ার হোসেন আনু হত্যার ৪ বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে সি আই ডি।

তিনি আরো বলেন, এই মামলাটি প্রথমে থানায়, এরপর পিবিআই, তারপর সিআইডিতে। সিআইডি জোরালো ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে এই মামলার আসল রহস্য উদঘাটন করে।

তিনি বলেন, মামলার শুরু থেকে সিআইডি ছোট্ট ছোট্ট আলামত নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো এক পর্যায়ে সিআইডির সন্দেহ সঠিক হয় এরপর মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় সোপর্দ করে যশোহর সিআইডি।

 

ভোরের পাতা/ভিআরথি

এই বিভাগের আরও খবর