ছিলেন শিক্ষক, হয়ে গেলেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
আন্তর্জাতিক: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী জো বাইডেন। কয়েক মাস আগে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কনভেনশনে নিজের স্ত্রীর পরিচয়টা এভাবে দিয়েছিলেন বাইডেন- ‘দেশজুড়ে আপনারা যারা আছেন তাদের সবাইকে বলছি, আপনাদের সেই প্রিয় শিক্ষকটির কথা ভাবুন, যিনি নিজেকে বিশ্বাস করার মতো আস্থা আপনাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছিলেন। জিল বাইডেন তেমনই এক ফার্স্টলেডি হবেন।’
১৯৫১ সালের জুনে নিউ জার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন নতুন মার্কিন ফার্স্টলেডি জিল জ্যাকবস। ৫ বোনের মধ্যে সবার বড় জিল বেড়ে উঠেছিলেন ফিলাডেলফিয়ার উইলো গ্রোভ শহরে। জো বাইডেন অবশ্য জিলের দ্বিতীয় স্বামী। এর আগে প্রাক্তন ফুটবল তারকা বিল স্টিভেনসনের সঙ্গে জিলের বিয়ে হয়েছিল।
১৯৬৬ সালে নেইলিয়া হান্টারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বাইডেন। পরে সেই নারীর গর্ভে জন্ম নেয় বাইডেনের তিন সন্তান। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯৭২ সালে প্রথম স্ত্রী ও এক বছর বয়সী শিশু কন্যা সন্তানকে হারান জো বাইডেন। এরপর ৩ ও ৪ বছর বয়সী দুই ছেলেকে বড় করে তোলার লড়াই শুরু করেন বাইডেন। সে সময়ে সন্তানদের জন্য রাজনীতিও ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তখনই বাইডেনের জীবনে আসেন জিল।
দুর্ঘটনার ৩ বছর পর নিজের ভাইয়ের মাধ্যমে জিলের সঙ্গে বাইডেনের পরিচয় হয়। বাইডেন তখন সিনেটর ছিলেন আর জিল তখনও কলেজছাত্রী। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব জমে উঠে। জিল আগেও বিয়ে করেছিলেন। ২৪ বছর বয়সে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে। সে কারণে এমন কাউকে খুঁজছিলেন, যার হাত আর কখনও ছাড়তে হবে না। বাইডেনই জিলের কাছে তার সেই কাঙ্ক্ষিত পুরুষ হয়ে উঠেন।
সেই কলেজছাত্রীকে বিয়ে করার জন্য একবার দুবার নয়, পাঁচবার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন বাইডেন। এ বিষয়ে মার্কিন সাময়িকী ভোগ’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে জিল বলেন, ‘আমি চাইনি বাইডেনের সন্তানরা তাদের আরেক মাকে হারাক। এজন্য আমি শতভাগ নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম।’
অবশেষে ১৯৭৮ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে জিলের সঙ্গে বাইডেনের বিয়ে হয়। ১৯৮১ সালে এই দম্পতির ঘর আলো করে এক কন্যার জন্ম হয়। সেই কন্যার নাম অ্যাশলি।
৬৯ বছর বয়সী জিল গত কয়েক দশক শিক্ষকতা করে কাটিয়েছেন। দুই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এই নারী ২০০৭ সালে একটি ইউনিভার্সিটি অব দিলাওয়ার থেকে শিক্ষায় ডক্টরেট করেন।
বাইডেনপত্নী ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসের আগে একটি কমিউনিটি কলেজ, একটি সরকারি স্কুল ও কিশোরদের একটি মানসিক হাসপাতালে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯১ থেকে ৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি দিলওয়ারের ব্রান্ডিওয়াই হাইস্কুলে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।
বারাক ওবামার শাসনামলে স্বামী বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন জিল নর্দার্ন ভার্জিনিয়া কমিউনিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ছিলেন।
সবশেষ গেল আগস্টে এক টুইটবার্তায় জিল লিখেছিলেন- ‘আমি যেটা করি সেটা শিক্ষকতা নয়। তবে এটাই আমি।’
বারাক ওবামার সময় জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে ৮ বছর ধরেই মার্কিন সেকেন্ড লেডি হিসেবে সম্মান পেয়েছেন জিল বাইডেন। ২০১৫ সালে এসে বাইডেনের এক ছেলে মারা যায়। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে তখনও স্বামীর পাশে ছিলেন জিল। নির্বাচনী ক্যাম্পেইনেও বাইডেনের ছায়াসঙ্গী হিসেবে থেকেছেন। বিভিন্ন সময় ট্রাম্পের নানা কথার উচিত জবাবও দিয়েছেন।
নির্বাচনে বিজয়ের পর ট্রাম্পের সমালোচনা করতেও ভুলেননি জিল। ভোটের পরের দিনই তিনি সমর্থকদের সামনে প্রকাশ্যে বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প আছেন শুধুমাত্র নিজের জন্য। তিনি নিজেরটা খুবই ভালো বোঝেন। এরচেয়ে কমও না, বেশিও না।’