চতুর্থ দফার বন্যায় ভাসছে উত্তরাঞ্চল

সময়: 5:14 am - October 3, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 50 বার
চতুর্থ দফার বন্যায় ভাসছে উত্তরাঞ্চল

ঢাকা: দেশের উত্তরাঞ্চল চলতি মৌসুমের চতুর্থ দফা বন্যার কবলে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়ও। এ দুই অঞ্চলের ৮ জেলায় চলছে টানা বন্যা। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাটেও বন্যা চলছে।

এখনো দশ জেলার নিম্নাঞ্চল বানের পানিতে প্লাবিত হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যার পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। কোথাও শহরের পিচ ঢালা রাস্তাও ডুবেছে পানিতে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানির সমতল বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উভয় নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল ছিল। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল বাড়ছে। এ পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার সুরমা-কুশিয়ারা বাদে অন্য প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলও দ্রুত বাড়ছে। দেশের উত্তর, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকার কিছু স্থানে নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

সংস্থাটির তথ্যমতে, বন্যা কবলিত জেলাগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট। এসব জেলায় প্রবাহিত ১১টি নদী ১৬ স্থানে বইছে বিপদসীমার উপরে। নদীগুলো হচ্ছে- ঘাঘট, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গুর, আত্রাই, ধলেশ্বরী, ছোট যমুনা, আত্রাই বেতনা ও পশুর।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়ার স্বাভাবিক সূচির পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে একদিকে এবার অতি বৃষ্টি হয়েছে। আরেক দিকে মৌসুম আগে এসে যেতেও বিলম্ব করছে। আর এ সমস্যা মোকাবেলা করছে মানুষ।

তিনি বলেন, অবশ্য এর নেপথ্যে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকে একটা বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের এ ঘটনার পেছনেও মানুষের অবদান আছে। তাই মানুষকেই এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে।

এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে দেশের ভেতরে বৃষ্টির প্রবণতা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। উজানেও বৃষ্টি হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বানের পানি আসছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন চলতে পারে।

২৭ জুন থেকে দেশে বন্যা চলছে। পরে ১১ জুলাই দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরু হয়। তৃতীয় দফার বন্যাটি শুরু হয়েছে ২০ জুলাই। আর চতুর্থ দফার বন্যা চলছে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চিলমারী (কুড়িগ্রাম): উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল সমূহের প্রায় এক হাজর ৫শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার চরাঞ্চলসহ ছয় ইউনিয়নের হাজার হাজার একর জমির ধান, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার শস্য পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধা: ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৬ সেমি. ও ২৭ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এর ফলে গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, সুন্দরগঞ্জ এবং সদর উপজেলার ৮০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন পানিবন্দি থাকায় তারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। গোবিন্দগঞ্জে ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ডে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সাদুল্লাপুরের ৬টি, সুন্দরগঞ্জের ২টি, সদরের ৫টি এবং পলাশবাড়ী উপজেলার ১টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

বাসাইল (টাঙ্গাইল): বন্যায় উপজেলার প্রায় এক হাজার পরিবার নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফুলকী, কাউলজানী, কাঞ্চনপুর, হাবলা, কাশিল, বাসাইল সদর ইউনিয়ন ও বাসাইল পৌরসভার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার গ্যাড়ামাড়া বিলের বাসাইল দক্ষিণ পাড়া এলাকায় কালভার্ট ভেঙে উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ১০টির বেশি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষগুলো।

ইসলামপুর (জামালপুর): উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ও ভারি বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যমুনার পানি হু হু করে বাড়ছে। এতে নিম্নাঅঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক আবদুল মান্নান জানান, শুক্রবার বিকাল নাগাদ বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর