বাজেটে জীবন-জীবিকায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তাগিদ বিএনপির
ঢাকা: আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন ও জীবিকার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুরে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজ বাসায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির বাজেট ভাবনা : অর্থবছর ২০২০-২১’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই তাগিদ দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিগত ৪ এপ্রিল জরুরি ভিত্তিতে নগদ সহায়তা প্রদান, তৈরি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী বিতরণ, ছিন্নমূলদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা, গার্মেন্টস ও রফতানিমুখি শিল্প, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প, কৃষি খাত, খাদ্য সংগ্রহ এবং প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সহায়তা সাপোর্ট প্রদান, স্বাস্থ্য খাতের জরুরি উন্নয়ন ও অপ্রত্যাশিত খাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে ৮৭ হাজার কোটি টাকার যে জরুরি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রস্তাব করেছিলাম সেটিকে আগামী বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ সংকটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। মন্দাকালীন বিনিয়োগ, ভোগ ব্যয় ও রফতানি কমে যাওয়ায় সামষ্টিক চাহিদা বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে সর্বাধিক জোর দিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার্বজনীন মৌলিক প্রয়োজনীয় যেমন – স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের বহুমুখীকরণ, উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, লাভজনক বাণিজ্যিক কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষি ও গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ আয়-রোজগার বাড়াতে হবে। সহজ শর্তে ব্যাপকভাবে কৃষি, পোল্ট্রি ও লাইভস্টক ঋণ প্রদান করতে হবে। তৈরি পোশাকসহ রফতানি খাতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। রফতানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে।’
‘বাজারে নগদ অর্থ-প্রবাহ নিশ্চিত করতে সক্রিয় মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে। মুদ্রানীতিকে স্থিতিশীলকরণ ও উন্নয়নমুখী- দুটো দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে তার ঐতিহ্যগত অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। প্রয়োজনে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানামুখী সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গত ৪ এপ্রিল বিএনপি প্রদত্ত অর্থনৈতিক প্যাকেজে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে’- যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লক্ষ্য ও খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পুনরুদ্ধার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। জোর দিতে হবে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর। সঙ্কটকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব বাজারের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। কর্মহীন, কর্মক্ষম বেকার, কর্মে নিয়োজিত দরিদ্র জনগণের প্রাতিষ্ঠানিক জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে হলে তাদেরকে নগদ অর্থ সহায়তা সাপোর্ট দিয়ে সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। কেননা পুনরায় করোনার মতো আরেকটি ধাক্কা এলে মানুষ দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে নিপতিত হবে। আর বিশ্বে করোনা ইতোমধ্যেই পুনরায় ধাক্কা দেয়ার দৃষ্টান্ত গড়েছে যেমন- দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর।’
তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রবর্তন, সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষাখাতে ব্যাপক বিনিয়োগের পাশাপাশি কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতে কর্মসংস্থান ধরে রাখা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ক্ষেত্রগুলো বিশাল প্রণোদনার দাবিদার। রাষ্ট্রের অর্থ জনগণেরই অর্থ। জনগণের অর্থ যাতে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে না যায়। প্রণোদনা কেবল প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরই প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান জরুরি; কিন্তু কর্মসংস্থানই মূল নিয়ামক।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘করোনাকাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সারা দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিভাবে ভেঙে পড়েছে। জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে হবে। বিগত ৪ এপ্রিল বিএনপি ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি করোনা জাতীয় মহামারির মতো সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’