ক্রীড়াঙ্গনেও বর্ণবিদ্বেষ, তবুও সফল কৃষ্ণাঙ্গরা

সময়: 5:51 am - June 9, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 66 বার
ক্রীড়াঙ্গনেও বর্ণবিদ্বেষ, তবুও সফল কৃষ্ণাঙ্গরা

ঢাকা: বর্ণবাদ প্রাচীণকাল থেকেই সামাজিক ব্যাধি হিসেবে পরিচিত। গায়ের রং কালো, ভিন্ন মত বা অভিবাসী হলেই বর্ণবাদের শিকার হতে হয়। শুধু সামাজিকভাবে হেও নয়, খুন করারও ইতিহাস ভুরি ভুরি। সম্প্রতি জর্জ ফ্লয়েড হত্যায় বর্ণবাদ বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে যুগে যুগে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকা-পুরো পৃথিবী জুড়েই বর্ণবাদের বিস্তার।

ক্রীড়াঙ্গনও বাদ পড়েনি বর্ণবাদ থেকে। ক্রিকেট, বক্সি কিংবা ফুটবল-সব খেলাধুলায়ই রয়েছে বর্ণবাদ। ইউরোপীয় ফুটবলে বর্ণবাদে অভিযোগ অনেক পুরানো। অনেক খেলোয়াড়ই বিভিন্ন সময় এর শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। ভিন্ন মহাদেশ থেকে যাওয়া এই ফুটবলাররা দুই বা তিন প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করেও এখনও প্রতিনিয়ত শুনছেন অভিবাসী ও শ্বেতাঙ্গ না হওয়ার অপবাদ। সময়ের সেরা খেলোয়াড়রাও শিকার হয়েছেন বর্ণবাদের।

ফুটবলে বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনহো থেকে শুরু করে লুকাকু, রহিম স্টালিং, দ্রগবা, বালোতিল্লি, মুসা মারেগা, দানি আলভেজরা বর্ণবাদের স্বীকার হয়েছেন একাধিকবার। অভিবাসী সংক্রান্ত কারণে বর্ণবাদের শিকার হয়েছে জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার মেসুত ওজিল, বাংলাদেশের হামজা চৌধুরী ও ফ্র্যান্সের করিম বেনজেমাদের মতো তারকারা।

এছাড়া বিশ্বসেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, ক্রিকেটার ড্যারেন স্যামি ও ক্রিস গেইলও শিকার হয়েছেন এই বর্ণবাদের।

বর্ণবাদ থামাতে কম চেষ্টা করেনি বিশ্বের ফুটবল নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফা। ইউরোপে বর্ণবাদ ভয়াবহ অবস্থা হওয়ায় সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ফিফাকে সাহায্য করছে উয়েফা। ফুটবলের এই দুই নিয়স্ত্রক সংস্থা মিলে ‘সে নো টু রেসিজম’ নামের একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে আসছে। যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো পৃথিবী থেকে বর্ণবাদের মতো ভয়াবহ ভাইরাসকে চিরতরে উচ্ছেদ করা।

ফুটবলের ইউরোপীয় সর্বোচ্চ সংস্থাটি শীর্ষ পর্যায়ের সকল প্ল্যাটফর্মের সদ্ব্যবহার করছে জনসাধারণের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও দ্ব্যর্থহীন বার্তাটি পৌঁছে দিতে বর্ণবাদকে না বলুন!

কিন্তু হতাশার বিষয় হলো ফিফা-উয়েফার এতো আন্তরিক প্রচেষ্টার পরও ফুটবলের মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদের ভয়াবহতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক বর্ণবাদের অভিযোগ আসছে ইউরোপীয় ফুটবলেই।

স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছিলেন ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার সিটি ফরওয়ার্ড রহিম স্টার্লিং, যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সেই রেশ পুরোপুরি কাটার আগেই, সান সিরোতে সিরি আ’র নাপোলি বনাম ইন্টার মিলান বক্সিং ডে ম্যাচে ‘বানর’ বলে চিৎকার করা হয়েছে কালিদৌ কুলিবালিকে লক্ষ্য করে। যা পরিষ্কারভাবেই বর্ণবাদী আচরণকে নির্দেশ করে।

মেক্সিকোর ক্লাব কুয়েরেতারোয় সই করার কয়েক দিনের পর রোনালদিনহোকে নিয়ে আপত্তিকর বর্ণবাদী মন্তব্য এসেছে মেক্সিকোর এক রাজনীতিকের কাছ থেকে। ইন্টার মিলানের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেই দর্শকদের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হন রোমেলু লুকাকু।

কালো হওয়ায় জঘন্য গালির শিকার হয়েছিলেন আইভরি কোস্টের সর্বকালের সেরা ফুটবলার দিদিয়ের দ্রগবা। ম্যানচেস্টার সিটি, এসি মিলান এবং সিরিআর ক্লাব ব্রেসিয়ার হয়ে খেলার সময় বর্ণবাদের শিকার হতে হয়েছে ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড মারিও বালোতেল্লি।বর্ণবাদের শিকার হয়ে রাগে-ক্ষোভে মাঠ ছেড়ে বেরিয়েই যায় মুসা মারেগা।

ক্যারিয়ারে বহুবার বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দানি আলভেজ। এই কর্মকান্ডের শিকার হয়েছেন ক্যামেরুনের রজার মিলারও।

অনেক ক্ষোভ ও অভিমান নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা দিয়েছেন জার্মানির মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল। বর্ণবাদী আচরণে অতিষ্ঠ ওজিল বলেছেন, যারা এত ঘৃণা পোষণ করে, সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব আর করা যাচ্ছে না। অনেক গর্ব নিয়ে জার্মানির জার্সি গায়ে তুলেছিলাম; কিন্তু বর্ণবাদ আর সহ্য করতে পারছি না।

এছাড়া ফ্র্যান্সের ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমাও এই বাইরে নয়। লিভারপুল তারকা মোহামেদ সালাহকে ট্যাকল করে বর্ণবাদের শিকার হন লেস্টার সিটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরীও। বর্ণবাদী মন্তব্য করেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত অলরেড সমর্থকরা।

বর্ণবাদী আচরণের দুঃখে অলিম্পিক স্বর্ণপদক ওহাইয়ো নদীতে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন বিশ্বসেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী।

এদিকে ক্রিকেটারদের বর্ণনায়ও উঠেছে এসেছে বর্ণবাদী আচরণ। ক্যারিবিয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি ও ক্রিস গেইলও স্বীকার হয়েছেন এই আচরণের।

খেলোয়াড় হিসেবে এরা সবাই ছিলেন বিশ্বসেরা। তবুও শ্বেতাঙ্গ না হওয়া ও অভিবাসী হওয়ার কারণে বর্ণবাদের স্বীকার হতে হয়েছে। আর্ন্তজাতিক ফুটবলের বাইরে ক্লাব ফুটবলে হরহামেশাই দেখা যায় ভালো খেলা বা দল জেতানোর পরও কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবাদী আচরণ থেমে নেই।

এই বিভাগের আরও খবর