শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট দিতে আলোচনা চলছে: শিক্ষামন্ত্রী
ঢাকা: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে নিতে আমরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করছি। ইতোমধ্যে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষেই ইন্টারনেটের ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্রদান অথবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেয়া যায় কি না সে বিষয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিসমূহের সাথে আলোচনা চলছে। মোবাইল অপারেটরগুলো বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সোমবার (৬ জুলাই) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির আয়োজনে ‘বর্তমান বৈশ্বিক সংকটকালে শিক্ষা বিষয়ে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপার সঞ্চালনায় অনলাইন সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। আলোচক হিসেবে আরো যুক্ত ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মাকসুদ কামাল এবং দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক শ্যামল দত্ত প্রমুখ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সংকটই আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হলে তথ্য ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাই আমাদের হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রমে যেতে হতো। করোনা আমাদের এক্ষেত্রে এগিয়ে দিয়েছে। আমরা এখন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমসহ অফিস-আদালতে বিভিন্ন মিটিং এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সীমাবদ্ধ থাকবে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে নতুন এই বাস্তবতার সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠব। করোনা পরবর্তী সময়েও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষার বিস্তার এবং মেধাবি জাতি তৈরিতে ইন্টারনেটকে ব্যয় নয়, এটিকে রাষ্ট্রের বড় বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। ভবিষ্যৎ শিক্ষার ক্ষেত্র কেবলমাত্র ক্লাসরুম কেন্দ্রিক হবে না। প্রচলিত চক-ডাস্টার পদ্ধতির সাথে ক্লাসরুম ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে হবে। অন্যথায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য মানব সম্পদ তৈরি করতে পারবনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে ৫জি যুগে প্রবেশ করবে। ৩ হাজার ৮ শ ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হয়েছে, ৭ শ ৭৭টি ইউনিয়নে ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে। দেশের হাওর, দুর্গম দ্বীপ ও চরাঞ্চলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ এর মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে।
শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন এবং পেশাদারদের মাধ্যমে তৈরি মানসম্মত ডিজিটাল কনটেন্ট এর মাধ্যমে পাঠ প্রদান সময়ের চাহিদা বলে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ডিজিটাল শিক্ষা কনটেন্ট তৈরি এবং কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠদান অপরিহার্য। শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য করতে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন কম্পিউটারে বাংলা সফটওয়্যারের জনক মোস্তাফা জব্বার।
শ্যামল দত্ত বলেন, আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং প্রযুক্তির সুযোগ সুবিধা সবাই যেন সমানভাবে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা পরবর্তীকালেও আরো নতুন নতুন দুর্যোগ আসতে পারে আমরা যেন সেই সংকটের সময়েও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি সে প্রস্তুতি রাখতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ের টিউশন ফি প্রদানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন একেবারে টিউশন ফি না দিলে প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষকদের বেতন দিতে পারবে না। তাই দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিয়ে মানবিক হতে হবে।