লকডাউন মানছে অনেকেই, নানা অযুহাতে বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা
ঢাকা: রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়ারী এলাকায় চলছে পূর্বঘোষিত লকডাউন। শনিবার (৪ জুলাই) ভোর সাড়ে ৬টা থেকে কার্যকর শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৫ জুলাই অর্থাৎ ২১ দিন। এসময় জরুরি প্রয়োজন বিশেষ করে মেডিকেল প্রয়োজনীয়তা ছাড়া কাউকেই বাহিরে যেতে না দেয়ার বিষয়ে অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
লকডাউন শুরুর পর থেকে প্রথম কয়েক ঘন্টা কাউকে বাহিরে যাওয়ার জন্য গেইটে না পাওয়া গেলেও বেলা বাড়ার পর থেকে ক্রমেই ভিড় বাড়তে থাকে বাহিরে যাওয়া বাসিন্দাদের। এতে নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বরত পুলিশ প্রশাসন। তবে বাহিরে যেতে দেয়া হয়নি কাউকেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও জয়কালী মন্দির, বলধা গার্ডেন, লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট এলাকার বাহির-প্রবেশের মোট ১৭টি গেইট বা সড়ক মুখ রয়েছে। তবে এসব সড়ক মুখের ১৫টি পথ বন্ধ করে মাত্র টিপু সুলতান রোড এবং হট কেক গলি নামের ২টি পথ খোলা রাখা হয়েছে। আর এ দুটি পথেই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসিন্দারা বাহিরে যাওয়ার জন্য ভিড় করছেন। তবে কাউকে যেতে দেয়া হয়নি। অনেককে দীর্ঘক্ষণ তর্ক করতেও দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ মেডিকেলের অযুহাতে বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাতেও মিলেনি সুযোগ।
হট কেক গলির প্রবেশ মুখে খলিলুর রহমান নামে একজন বাসিন্দাকে দেখা গেছে সকাল ১১টার দিকে বাহিরে যাওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে অনেক্ষণ তর্ক করতে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে ফেরত পাঠানো হয়।
বাহিরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা আছে। সামনে ঈদ। নানা প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে এখন। কিন্তি যদি ঈদের আগে এভাবে ঘরবন্দি হয়ে থাকি তাহলে ব্যবসা করবো কিভাবে আর সারাবছর সংসার চালাবো কিভাবে।
তিনি আরও বলেন, রমজানের ঈদেও ব্যবসা করতে পারিনি। এখনও যদি না পারি তবে ব্যবসাপাতি লাটে উঠবে। এটা বুঝাবো কারে? কেউ তো বুঝতে চাই না আমাদের সমস্যা। আমরা তো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসা করতে চাইছি। সে অনুমতিও দেয়া হয়েছে। তাহলে লকডাউনের নামে এটা বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
এমন অভিযোগ শুধু খলিলুর রহমানের নয়, গেইটে ভিড় করা আরও একাধিক বাসিন্দার। তাদের সবার অভিযোগ বাহিরে যাওয়া জরুরি হলেও বাহিরে যেতে দিচ্ছে না।
স্বপন মাহমুদ নামের অপর বাসিন্দা বলেন, পুলিশ শুধুমাত্র মেডিকেলের রোগীদের বাহিরে যেতে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা তো রোগী না হলেও তার চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে যাবো যদি ব্যবসাটা করতে না পারি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বরত ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহির হোসেন বলেন, আপনি তো দেখলেন বাহিরে যেতে দিচ্ছি না বলে আমাদের উপর রাগ দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা তো তাদের জীবনের কথা ভেবেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে এমন একাধিক বাসিন্দাকে শত চেষ্টায় বুঝিয়ে বুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়েছি। তাদেরকে আমরা বুঝাতে চাচ্ছি ব্যবসার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু উল্টো তারা আমাদেরকে বুঝাচ্ছে ব্যবসা না থাকলে জীবনের কি হবে। তাহলে বুঝেন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করাটা কতটা কষ্টকর। তবুও আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। এখন পর্যন্ত পুলিশ, চিকিৎসক-নার্স এবং সাংবাদিক ছাড়া কাউকে ভেতরে এবং বাহিরে যেতে দেয়া হয়নি। তাদেরকেও প্রবেশ-বাহিরের সময় খাতায় সব তথ্য এন্ট্রি করে রাখা হয়েছে। ’
এদিকে, লকডাউনে যেকোনও ধরনের অনিয়ম রোধে পুলিশ ও অন্যান্য প্রশাসনের পাশাপাশি ওয়ারী এলাকায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। এতে স্থানীয় প্রশাসন অনেকটাই আশাবাদী লকডাউন কার্যকরি করতে।
এদিকে, প্রথম দিনেই স্বেচ্ছাসেবীদের মাঝে ব্যস্ততা দেখা যায়নি। স্থানীয় একজন স্বেচ্ছাসেবক রফিকুল ইসলাম রঞ্জু বলেন, প্রথম দিন তো তাই বাসিন্দাদের এখনও তেমন কোন প্রয়োজন হচ্ছে না। বলতে গেলে এখন পর্যন্ত কারো কোন প্রয়োজনীয়তা দেখিনি। অনেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী আগেই সংগ্রহ করে রেখেছেন লকডাউনের খবর পেয়ে। তবুও আমরা প্রস্তুত আছি। যদি হঠাৎ কারো কোন প্রয়োজন পড়ে সেজন্য।
লকডাউনের বিষয়ে ডিএসসিসির ৪১ নাম্বার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারওয়ার হোসেন আলো বলেন, ‘আমরা বাসিন্দাদের সুবিধার্থে প্রায় ২’শ স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োজিত রেখেছি। যাতে করে কোন বাসিন্দায় যেন নিত্য প্রয়োজনে বাহিরে যেতে না হয়। পাশাপাশি লকডাউন এলাকার ভেতরে সবগুলো সুপার সপ খোলা রাখা হয়েছে যাতে নিত্য প্রয়োজনী পণ্যের জন্য বাহিরে যেতে না হয়। তবুও সকাল থেকে বাহিরে যাওয়ার হিড়িক ছিল বাসিন্দাদের।’
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ ব্যবসার অযুহাত দেখাচ্ছে। আবার কেউ কেউ হাসপাতালের অযুহাত দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা যখন বলি জীবনের চেয়ে ব্যবসা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় তখন অনেকে বুঝতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে বাসায় ফেরত পাঠায়। আবার যারা হাসপাতালের অযুহাত দেখাচ্ছে তাদেরকে যখন বলি অ্যাম্বুল্যান্সে উঠো, আমাদের কর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে যাবে এবং চিকিৎসা শেষে নিয়ে আসবে। তখনই তারা পিছু হাটে। এতে বুঝায় যায় তারা অযুহাত দেখাচ্ছে। তবে আমরা এতে কোন সুযোগ দিচ্ছি না। কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে যা কিছু ব্যবস্থা নেয়া দরকার সবিই নিচ্ছি।’
কাউন্সিলর আলো বলেন, ‘নিম্ম আয়ের বাসিন্দাদের জন্য আমরা খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ রেখেছি। নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করেছি। টেলিমেডিসিন সেবা ও অ্যাম্বুলেন্স এবং আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রেখেছি। সব মিলিয়ে প্রস্তুতিটা যথেষ্ট। কিন্তু এখন প্রয়োজন শুধু বাসিন্দাদের সহযোগিতা। তাহলে আমরা সফল হবো।’