চীন-ভারতের উত্তেজনা, প্রভাব ফেলছে বিশ্ব বাণিজ্যে

সময়: 10:48 am - June 29, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 80 বার
চীন-ভারতের উত্তেজনা, প্রভাব ফেলছে বিশ্ব বাণিজ্যে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সীমান্ত নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উভয়েই উত্তেজনা কমানোর কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। এর জেরে দুই দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যকার বেশ কয়েকটি চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। ভারতে চীনা পণ্য ও নাগরিকদের বয়কটের দাবিও জোরালো হয়ে উঠছে। খবর সিএনএন বিজনেস।

বাণিজ্য সংস্থাগুলো বলছে, চলতি সপ্তাহে ভারতীয় চেকপয়েন্টে চীনা শিপমেন্ট আটকে দেয়া শুরু হয়েছে। গত ১৫ জুন লাদাখে উভয় পক্ষের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের জেরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্কে ব্যাপক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

দি ইন্ডিয়া সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস অ্যাসোসিয়েশন (আইসিইএ) গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবগত করে যে কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই ভারতের বন্দরগুলোয় চীন থেকে আমদানি হওয়া সব ইলেকট্রনিক পণ্য তল্লাশি করা হচ্ছে। আইসিইএ ভারতে অ্যাপল ও ফক্সকনের মতো বৃহৎ ইলেক্ট্রনিকস কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে আইসিইএ চেয়ারম্যান পঙ্কজ মহিন্দ্রো বলেন, অনেক বিলম্ব করার পরও পণ্য ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে। এছাড়া এখন নতুন করে শতভাগ পরীক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে। নির্বিঘ্ন পণ্য চালানের বিষয়টি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এশিয়ার দুই প্রধান অর্থনীতির মধ্যে টানাপড়েনের বিষয়টি খুব খারাপ একটা সময়ে এসেছে। এমনিতেই করোনা ভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে ব্যবসায়ের বিভিন্ন স্তরে জটিলতা চলছিল। বিরোধের আগে এ খাত স্বাভাবিক সময়ের মাত্র ৪০ শতাংশ সক্রিয়তা পেয়েছিল।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই পণ্য ছাড় দেয়া হয়। গত তিন মাসে ব্যাপক লোকসানের পর আমরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যখন স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছিলাম, ঠিক তখনই এ সমস্যা দেখা দিল।

সিএনএন বিজনেসের পক্ষ থেকে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা কাছে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।

এসব ঘটনায় ভারতের অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দ্য চেন্নাই কাস্টমস ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) জানায়, কর্তৃপক্ষ থেকে সব বন্দরের বৈদেশিক পণ্য দেখভালকারীদের বলে দেয়া হয়েছে চীন থেকে আসা সব কনসাইনমেন্ট আটকে দিতে।

যদিও গত সপ্তাহে সীমান্ত বিরোধের আগে থেকেই ভারতের চীনবিরোধী মনোভাব দানা বাঁধছিল। একইসঙ্গে চীনা পণ্য বয়কটের আওয়াজ উঠেছিল। সর্বশেষ নতুন এক নীতিমালায় ভারতের সম্ভাবনাময় অনলাইন খাতে ভবিষ্যতে চীনা বিনিয়োগ সংকুচিত করার দিকেও এগোচ্ছে নয়াদিল্লি।

ভারত অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে। প্রযুক্তি খাতের শক্তিঘর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে চীন ভারতকে ব্যাপক সহায়তা করেছে। ভারতের অধিকাশ শিল্প পণ্যে কাঁচামাল চীন থেকে আসে। এমনকি ওষুধ তৈরির ৭০ কাঁচামালই চীন থেকে আসে। ফলে বেইজিং ও নয়াদিল্লির টানাপড়েনের অর্থনৈতিক ঝুঁকিও অনেক বেশি।

দুই পক্ষের মধ্যে সাম্প্রতিক তিক্ততার নিদর্শন হিসেবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি গ্রেট ওয়াল মোটরসসহ বেশ কয়েকটি চীনা কোম্পানির সঙ্গে ৬০ কোটি ডলারের চুক্তি বাতিল করেছে।

দুই পক্ষের এই উত্তেজনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) নয়াদিল্লির বেশকিছু হোটেল জানিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক এ বিরোধের জেরে তারা কোনো চীনা অতিথি গ্রহণ করবে না।

অন্য একটি ব্যবসায়িক সংগঠনের কাছে পাঠানো চিঠিতে দিল্লি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাহেন্দ্র গুপ্ত বলেন, চীন যেখানে বারবার আমাদের সাহসী ভারতীয় সেনাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, এ সময়টায় আমরা কোনো চীনা নাগরিককে কক্ষ দেব না। একই সঙ্গে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চীনা পণ্য ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে বলে জানায় জোটটি।

শুধু এ ধরনের বড় ব্যবসায়ী সংগঠনই নয়, বরং চীনা পণ্য বয়কটে সব ভারতীয়র প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশের লাখো ছোট দোকানপাটের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন দ্য কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি)। গত সপ্তাহে তিন হাজারেরও বেশি চীনা পণ্যের তালিকা করে তা বর্জনে ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গ্রুপটি।

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন ভারতের পক্ষে এত সহজে চীনা পণ্য বয়কট করা সহজ হবে না। কারণ ভারতের ২৮ শতাংশের মতো শিল্প পণ্যের কাঁচামাল চীন থেকে আসে। এছাড়া অন্যান্য রেডিমেড পণ্য, ওষুধের ৭০ শতাংশ কাঁচামাল আসে। ভারতের মোবাইল মার্কেটের ৭২ শতাংশ চীনের দুইটি কোম্পানির হাতে রয়েছে। সুতরাং সবমিলিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির জাতীয়তাবাদী চীনা পণ্য বয়কটের ডাকে ভারতেরই ক্ষতি বয়ে আনছে বলে মনে করে বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।

এই বিভাগের আরও খবর