অটোমোবাইল শিল্পে মাসে ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে
ঢাকা: করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি মাসে অটোমোবাইল খাতে (কার, জিপ, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাক, ইত্যাদি) দুই হাজার কোটি টাকা ক্যাপিটাল লস এবং ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা রেভিনিউ লস হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতিতে অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে আগামী এক বছরের জন্য সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশে অটোমোবাইল সেক্টরের ভূমিকা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন (বামা)।
সংবাদ সম্মেলনে বামা’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, যুগ্ম মহাসচিব সোহানা রউফ চৌধুরী বক্তব্য দেন।
বামা’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে দাবি তুলে ধরেন সভাপতি মাতলুব আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুটি দাবি। এক, চীন বা ভারত থেকে যে লাইট ট্রাক আসে তা পিকআপ হিসেবে নিবন্ধিত হয়, এটা বন্ধ করতে হবে। বিআরটিএ খুব সতর্কতার সাথে ইন্সপেকশন করে পিকআপ রেজিস্ট্রেশন দেবে।’
‘আমাদের দ্বিতীয় দাবি, অন্তত এক বছরের জন্য অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ সম্পূর্ণভাবে কর-শুল্ক যা আছে, সব মাফ করতে হবে। এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ‘কভিড-১৯ এর জন্য নতুন গাড়ি আনতে গেলে যে ডলার লাগবে, আমাদের ধারণা যেভাবে এক্সপোর্ট আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে, আগামীতে আমাদের কাছে ইমপোর্টের জন্য ডলার কমে আসবে। আর ডলার বাজারে না পাওয়া গেলে আমাদের নতুন বাড়ি আনতে অসুবিধা হবে। তখন আমাদের কাছে যে গাড়িগুলো আছে সেটা বাস-ট্রাক হোক, মোটরসাইকেল হক, এটা অন্তত আরো দুটি বছর আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।’
করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে অটোমোবাইল খাতের ক্ষতির বিষয়ে কথা বলেন বামা’র সাবেক সভাপতি এবং রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যে লস (ক্ষতি) হচ্ছে তার পরিমাণ বিশাল। আমাদের ক্ষতিটা হচ্ছে রেভিনিউ ও ক্যাপিটাল এই দুইভাবে। আনুমানিক প্রতি মাসে আমাদের ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা রেভিনিউ লস হচ্ছে। আর ক্যাপিটাল লস হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ মোটরসাইকেল ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ মোটরসাইকেল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাইড শেয়ারিং বা ভাড়ায় ব্যবহার হচ্ছে। দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে ইতোমধ্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। দেশের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেল দিয়ে পূরণ হচ্ছে। দেশে তৈরি মোটরসাইকেল ইতোমধ্যে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মোটরসাইকেল খাত থেকে সরকার প্রতিবছর শুল্ক করবাবদ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আহরণ করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ থ্রি হুইলার (তিন চাকার যানবাহন) খুবই জনপ্রিয়। গ্রামেগঞ্জে যাতায়াতের ক্ষেত্রে থ্রি হুইলার বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ও সচল রাখার জন্য এর অবদান অপরিসীম। প্রতিদিন প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী থ্রি হুইলারের মাধ্যমে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত না থাকার কারণে প্রায় ৯০ শতাংশ থ্রি হুইলার রাস্তায় চলাচলের বৈধতা পাচ্ছে না। থ্রি হুইলার খাত থেকে সরকার ভ্যাট ও শুল্কবাবদ প্রতিবছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আহরণ করে থাকে। থ্রি হুইলার রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করলে সরকার প্রতিবছর রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ফিটনেসবাবদ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে সক্ষম হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের অর্থনীতিতে ট্রাক খাতের অবদান তুলে ধরেন ইফাদ অটোসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসকিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত প্রায় ৪ লক্ষাধিক ট্রাক রয়েছে, যা আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে চলেছে। নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, শিল্প-কারখানার উন্নয়ন, ভারী শিল্প বিশেষত জাহাজভাঙা, সিমেন্ট, ইস্পাত শিল্পের মতো উন্নয়নের ফলে বাণিজ্যিকভাবে ট্রাক পরিবহনের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৩০ লাখের অধিক মানুষ সরাসরি বাণিজ্যিক পরিবহন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, ট্রাক আমদানির কারণে প্রতিবছর ভ্যাট শুল্কবাবদ আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি সরকারের কোষাগারে জমা হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর ট্রাকের নিবন্ধন ফি, ফিটনেস নবায়ন, রোড পারমিট ফি এবং ড্রাইভারের লাইসেন্স ফি বাবদ সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে।
সিঙ্গাপুর থেকে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন র্যাংগস মটর লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানা রউফ চৌধুরী। তিনি বাস-মিনিবাসের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘গণপরিবহন বাংলাদেশের মানুষের কাছে সব থেকে জনপ্রিয়। বাংলাদেশের প্রায় ৬০ হাজার বাস চলে। বাসের কারণেই বড় শহরের যানজট অনেক কমে এসেছে। বাস ও মিনিবাস যত বেশি চালাতে পারব, আমার মনে হয় আমাদের ট্রাফিক সমস্যা কমে আসবে। বাস ও মিনিবাস আমদানি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিবছর আমরা সরকারকে দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব দিচ্ছি।