‘প্রতিটি মহৎ ও কল্যাণকর অর্জনে আ.লীগের ভূমিকা রয়েছে’
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।
সংকট উত্তরণে তার সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে এবং আওয়ামী লীগ দল হিসেবেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।’
আগামীকাল আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে তিনি আরো বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের বিভিন্ন খাতে মোট প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে এককালীন ২৫০০ টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়েছে।’
সম্প্রতি ২ হাজার ডাক্তার ও ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে নিয়োগ দেওয়াসহ আরও প্রায় ৩ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন ও জীবিকা রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে প্রয়োজনীয় অফিস-আদালত-কলকারখানা চালু করা হয়েছে। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যে কোন জরুরি চাহিদা মেটাতে ২০২০-২০২১ সালের অর্থবছরে ১ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
‘এই দুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ সংকট উত্তরণে আমাদের সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে,’ বলেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের অগণিত নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি স্মরণ করেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক সামসুল হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে।
‘শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। আমি স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতাসহ স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে শহীদ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের-যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ গণমানুষের এক সুবৃহৎ সংগঠনে পরিণত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির মুক্তি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভুখন্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস উল্লেথ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের আত্মপরিচয়ের সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৫২’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২’র আইয়ুবের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪’র দাঙ্গার পর সাম্পদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯’র গণঅভ্যূত্থানসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি ও মানুষের দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই অর্জন করেছে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক এবং মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্বদানের সুমহান গৌরব। ১৯৭০’র নির্বাচনে বাঙালি জাতি আওয়ামী লীগের পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় দেয়। যার ধারবাহিকতায় ১৯৭১’র ৭ই মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
‘১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু করে ইতিহাসের নির্মমতম গণহত্যা। গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত সফল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন জাতির পিতা তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের সংগ্রামে নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তখনই ঘাতকেরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ও অবৈধ সেনাশাসকদের নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। কিন্তু কোন অপচেষ্টা কখনও সফল হয়নি। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকরা জীবন দিয়ে সকল প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে টিকিয়ে রেখেছে, শক্তিশালী করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকারই খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদেশকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কারও মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য শান্তি চুক্তি। আওয়ামী লীগের এই পাঁচ বছরের শাসনামলে জাতীয় ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অপশাসন, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে পুনরায় বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
গত সাড়ে ১১ বছরে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরণের ওষুধ পাচ্ছেন। শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হার কমেছে, গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ বছরে পৌঁছেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। সাক্ষরতার হার ৭৩ ভাগের উপরে উন্নীত হয়েছে। ৯৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। “আমরা মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিক ও কর্মমুখী করেছি। শহরের নাগরিক সুবিধা গ্রামে পৌছে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ বিজয় করেছে বাংলাদেশ। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ২৮টির অধিক হাই-টেক পার্ক, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২, গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মাসেতু, এলএনজি টার্মিনাল, এক্সপ্রেসওয়ে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা
প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি”, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করেছি। ওয়াদা অনুযায়ী য্দ্ধুাপরাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা করছি। জঙ্গিবাদ ও হরতালের অবসান ঘটিয়ে দেশকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ থেকে বছরব্যাপী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী-মুজিব বর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে আমরা মুজিবর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করেছি। তবে মুজিব বর্ষে গৃহহীনদের ঘর করে দেয়া হবে। এদেশে কেউ গরীব, গৃহহীন থাকবে না।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত করবেন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারব।” স্বাস্থ্যবিধি মেনে, গণজমায়েত না করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। সূত্র: বাসস