হলমার্ক কেলেঙ্কারির আসামিকে জিম্মি করে ২ ভুয়া সাংবাদিক গ্রেপ্তার

সময়: 4:08 pm - September 1, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 86 বার
হলমার্ক কেলেঙ্কারির আসামিকে জিম্মি করে ২ ভুয়া সাংবাদিক গ্রেপ্তার

ঢাকা: বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে জিম্মি করে চাঁদাবাজির ঘটনায় দুই ভুয়া সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরার একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকায় তাকেও গ্রেপ্তার দেখিয়েছে র‌্যাব। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান।

তাদের কাছ থেকে ক্যামেরা ও বেসরকারি একটি টেলিভিশনের বুম, পাঁচ লাখ টাকা, তিনটি একশ টাকার স্টাম্প, দুটি ব্যাংকের (৪৫ লাখ ও ৫০ লাখ টাকার) চেক জব্দ করা হয়।

বুধবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সাংবাদিকতার আড়ালে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও অপরাধীদের টার্গেট করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। বেশ কিছু দিন ধরে দেশের নামিদামি ও নামসর্বস্ব বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে রাজধানীর উত্তরায় চক্রটি তাদের অপরাধ কার্যক্রম চালাচ্ছিল।

র‌্যাব জানায়, বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আব্দুল মালেককে ব্ল্যাকমেইল করেন এই চক্রের প্রধান পরিকল্পনাকারী একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও তার সহযোগী মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম।

৩১ আগস্ট দুপুরে আব্দুল মালেককে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে এই চক্র। এমন অভিযোগে র‌্যাব তাকে (ভিকটিম) উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। একই দিন বিকালে উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে মালেককে উদ্ধার করা হয়। এসময় পরিকল্পনাকারী ইকবাল হোসেন ও তার সহযোগী আমিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন তারা মালেককে ব্ল্যাকমেইল করতে বেশ কয়েকদিন তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি কখন উত্তরখানে আসবেন তখন অপহরণ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। ঘটনার দিন দুপুরে মালেক উত্তরখানে তার আত্মীয়ের বাসায় গেলে পরিকল্পনাকারীরা সেখানে যান। এসময় তারা এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন।

তিনি আরো বলেন, চাঁদা পরিশোধ না করলে তার বিরুদ্ধে মিডিয়াতে হলমার্ক কেলেঙ্কারি বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে বলে হুমকি দেন। পরে মালেককে উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর স্বজনদের কাছে ফোন করে চাঁদা দাবি করা কোটি টাকা, চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে আসতে বলা হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, অভিযুক্তরা একটি চাঁদাবাজ দলের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন। তাদের দলে ১০-১৫ জন সদস্য আছে বলে র‌্যাবকে জানিয়েছে। চক্রের সদস্যরা এলাকায় প্রাণের বাংলাদেশ, স্বাধীন সংবাদ, বি ডাব্লিউ নিউজ, প্রথম বেলা, ডেইলি নিউজসহ আরও কয়েকটি সংবাদপত্রের পরিচয় দিতেন।

তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর উত্তরা ও উত্তরখান এলাকায় এসব সংবাদপত্রের পরিচয় দিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, অপরাধী ও সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। ইকবাল হোসেন ও আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলা রয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, আমরা বেসরকারি ওই টেলিভিশনে যোগযোগ করেছি। তারা জানিয়েছে- চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে সাংবাদিক ইকবালকে কয়েক মাস আগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এই প্রথম অভিযোগকারীকেও আমাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। অভিযোগকারী আব্দুল মালেক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি ব্যাংকের ঋণখেলাপি। এছাড়া হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই কেলেঙ্কারিতে সে সময় যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা হয়েছিল তার মধ্যে মালেকের প্রতিষ্ঠানটিও ছিল। হলমার্ক মামলার মালেক একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কাযর্ক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর