আফতাবনগর গরুর হাটের জায়গা নিয়ে ২ সিটির মধ্যে রেষারেষি!

সময়: 7:27 am - July 3, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 60 বার
আফতাবনগর গরুর হাটের জায়গা নিয়ে ২ সিটির মধ্যে রেষারেষি!

নিজস্ব প্রতিবেদক : দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ড ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আফতাবনগরের ৩৭ নং ওয়ার্ড এলাকায় গরুর হাট নিয়ে ২ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, এই গরুর হাটের জায়গা নিয়ে ২ সিটি করপোরেশনের মধ্যে টানা হেচরা চলছে।

দক্ষিণ সিটি বলছে, ৩ বছর ধরে তারা এই হাটের ইজারা দিচ্ছে, আর উত্তর সিটি বলছে আমাদের জায়গায় তারা ইজারা দিয়েছে আমরা কিছু বলি নাই এখন আমাদের উ্ত্তরের জায়গায় দক্ষিণ সিটিকে ইজারা দিতে দেওয়া হবে না। এছাড়া স্থানীয় ২ জন প্রতিনিধিদের দাবি এটা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক ব্যাপার এ বিষয়ে তারা কোন মন্তব্য করতে চান না।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি গরুর হাট উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পড়েছে। যার কারণে এই হাটকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র ও কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হচ্ছে বলে সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে জানা গেছে।

সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া তথ্যমতে জানা যায়, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০১৮, ২০১৯, ও ২০২০ সাল পর্যন্ত এ হাটটি পরিচালনা করেন। এদিকে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ পর্যন্ত কখনো হাঁটটি নিলামে ডাকেনি। হঠাৎ এবার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক নিজ ক্ষমতা বলে এই গরুর হাটটি উত্তর সিটি করপোরেশন মধ্যে পড়েছে বলে দাবি করেন। এবং হাটটি ইজারা দিয়ে দেন।

দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে জানা গেছে, দক্ষিণের ৩ নং ওয়ার্ডের ৯০ শতাংশ জায়গায় পড়েছে নিলামে দেওয়া এ হাটটি। দক্ষিণের দাবি ম্যাপ অনুযায়ী শুধু উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ নং ওয়ার্ডের ১০ শতাংশ জায়গা পড়েছে উত্তরের মধ্যে। সেই নিয়ম অনুযায়ী এ হাটের দাবিদার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কারণ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৯০ শতাংশ জায়গার অংশীদার। তবে উত্তর সিটির দাবি ১০ শতাংশ জায়গা নয় অধিকাংশ জায়গা আমাদের ম্যাপের মধ্যে চলে আসছে।

এদিকে নিলামে ডাকা এই গরুর হাটকে কেন্দ্র করে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে। যা নিয়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণ সিটি, ও কর্পোরেশনের ঠিকাদার, কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এক বিতর্ক আলোচনা চলছে। যেটা নিয়ে যেকোন সময় বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানা গেছে।

উত্তর সিটির ৩৭ ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম জনপ্রতিনিধি হওয়ায় এই গরুর হাটটি তিনি নিতে পারছেন না। যার কারণে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হককে ম্যানেজ করে তার বোনের জামাই মাহবুবুর রহমান শিমুল এর নামে তিনি এই গরুর হাট নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে গরুর হাট ইজারাদের দেওয়া তথ্য মতে এসব জানা গেছে।

জানা যায়, সিটি কর্পোরেশন আইনে রয়েছে কোন জনপ্রতিনিধি স্থানীয় গরুর হাটে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। এজন্য তিনি আত্মীয়-স্বজনের নামে গরুর হাট নেওয়ার চেষ্টা করছে ‌‌। যার বিনিময়ে সিটি কর্পোরেশন উত্তর এর প্রধান সম্পত্তি অফিসার মোজাম্মেল হককে ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন বলে এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে মোজাম্মেল হক এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন।

দুই সিটি কর্পোরেশনের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণের মেয়র উত্তরের মেয়রকে এই হাটের বিষয় জানালে উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বিষয়টি দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে এ বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তারা মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

উত্তর সিটির বিশ্বস্ত সূত্র মতে জানা যায়, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক নিজে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য এই গরুর হাটটি দু-একদিনের মধ্যে নিজস্ব লোকের মধ্যে নিলাম করতে চান। যার জন্য এলাকায় জনপ্রতিনিধি (জাহাঙ্গীর ও তার বোন জামাই শিমুলের) কাছ থেকে তিনি ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন।

এই বিষয়ে উত্তরের ৩৭ ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর বলেছেন, আমিতো গরুর হাট নিচ্ছি না। সিটি সিটি কর্পোরেশন যাকে দিবে সেই তো নিবে। এ বিষয়ে এর থেকে বেশি আমি কিছু বলতে পারছি না।

জানা যায়, এই গরুর হাটকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় উত্তরের ঠিকাদার, দক্ষিণে ঠিকাদার ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোঃ রাসেল সাবরিন এর মুঠো ফোন ও অফিসিয়াল টেলিফোন নম্বরে একাধিকবার ০১৩১-৮২৪৭৯৪৭, ৯৫৬৫৯৮৬ ফোন করে যোগাযোগ করা হলে তিনি কলটি রিসিভ করেন নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, দক্ষিণ সিটি সব সময় আমাদের জায়গায় ইজারা দিয়ে আসছে। আমরা কিছু বলি নাই। এবার আমরা ইজারা দিয়েছি। তিনি বলেন, আফতাবনগরের সব জায়গা আমাদের। আমাদের জায়গায় আমরা ইজারা দিয়েছি। তাতে কারো সমস্যা হবার কথা না।

তিনি বলেন, জায়গাটা উত্তর সিটির মধ্যে কিন্তু দক্ষিণ সিটি সব সময় ইজারা দিয়ে আসছে। উত্তর সিটি কিছু বলে নাই। এবার জায়গাটা দক্ষিণ সিটিকে দেওয়া হবে না।

এটার ৯০ শতাংশ জায়গায় পড়েছে দক্ষিণ সিটির মধ্যে আপনারা কি নিয়ম অনুযায়ী ইজারা দিতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব মিথ্যা কথা জায়গা আমাদের উত্তরের মধ্যে পড়ছে। এজন্য ইজারা আমরা দিচ্ছি।

উত্তরের ৩৭ ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের বোন জামাই যুবলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান শিমুলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তাদের গরুর হাটের ইজারা দিবেন বলে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলেতে চাই না। এটা মিথ্যা কথা। আমাদের জায়গায় এবার আমরা ইজারা দিয়েছি। দক্ষিণ সিটি ইজারা দিয়েছে তাদের জায়গায়। তিনি বলেন, আর কিছু জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে ফোন দেন।

এ বিষয়ে উত্তর সিটির ৩৭ ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিক ফোন করা হলে তিনি বারবার ফোনটি কেটে দেন। তাছাড়া তিনি এর আগে জানিয়েছেন এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চান না। এটা সিটি কর্পোরেশনের ব্যাপার।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ মাকছুদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দক্ষিণ সিটি- উত্তর সিটির প্রশাসনিক ব্যাপার এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।

 

ভোরের পাতা/থিআরথী

এই বিভাগের আরও খবর