৩৬ জেলায় পৌঁছেছে করোনার টিকা

সময়: 8:37 am - January 31, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 70 বার
করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৯ জেলায় ১২০ মৃত্যু

ঢাকা: আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায় টিকা পৌঁছে গেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর বেক্সিমকো কারখানায় রাখা করোনা ভাইরাসের ২৬ লাখ টিকা নির্ধারিত জেলায় পাঠানো শুরু করে ওষুধ প্রশাসন। কড়া নিরাপত্তায় বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন জেলায় জেলায় এসব টিকা সরবরাহ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত দেশের ৩৬টি জেলায় করোনা ভাইরাসের টিকা পৌঁছেছে।

গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। ওইদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাও টিকা নেবেন। একইসময়ে সারা দেশে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।

তিনি বলেন, ‘৭ ফেব্রুয়ারি ফ্রন্টলাইনারদের সঙ্গে দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও টিকা নেবেন। ওইদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেড়শো জনকে টিকা দেয়া হভে। আমরা আশা করছি, ডিজি অফিসের সবাই ওইদিন টিকা নেবেন।’

যে ৩৬টি জেলায় করোনার টিকা পাঠানো হচ্ছে সেগুলো হলো- ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নরসিংদী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাট।

সারা দেশে টিকা কার্যক্রমের শুরুতেই স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নেবেন। এরপর সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং প্রাধিকারের তালিকা অনুযায়ী টিকা দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে রবিবার থেকে টিকাদানকারী ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় আপাতত ৪৩টি স্থানে করোনার টিকা দেয়া হবে। সেখানে ৩৫৪টি টিম কাজ করবে। সংখ্যাটা কম-বেশি হতে পারে। আর সব মিলিয়ে সারা দেশে ৬ হাজার ৬৯০টি টিম কাজ করবে। কিন্তু এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে না। ইউনিয়ন পর্যায়ে অন্তত ৪ হাজার ৬০০টি টিকা কেন্দ্র হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ১১ হাজার মানুষ সুরক্ষা ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

এর আগে গত বুধবার (২৭ জানুয়ারি) কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বহুল প্রতীক্ষিত টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এবং প্রথম ৫ জনকে টিকা দেয়া দেখেন। সব মিলিয়ে উদ্বোধনী দিনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়।

পরদিন ২৮ জানুয়ারি ঢাকার ৫টি হাসপাতালে একদিনে ৫৪১ জনকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হয়। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৪টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ৪টি, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪টি, কুর্মিটোলনা জেনারেল হাসপাতালে ৪টি ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে একটি বুথে করোনার টিকা দেয়া হয়।

ওইদিনই বিএসএমএমইউ বুথে প্রথম টিকা নেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। একইসময়ে দেশের প্রথম সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে টিকা নেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ওইদিন একই বুথে টিকা নেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। আর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সেদিন ঢামেক হাসপাতালের বুথে টিকা নেন।

বাংলাদেশে যেহেতু করোনা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী প্রথম দফায় ঢাকার উল্লিখিত ৫টি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির ওপর এ টিকা প্রয়োগ করার পর তাদের এখন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

গত ২১ জানুয়ারি উপহার হিসেবে ভারতের পাঠানো করোনা ভাইরাসের ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছে। এর ৪ দিন পর গত সোমবার (২৫ জানুয়ারি) ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিশেষ ফ্লাইটে এসেছে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি আরও ৫০ লাখ টিকা। টিকাটির নাম দেয়া হয়েছে ‘কোভিশিল্ড’।

গেল ৫ নভেম্বর ‘কোভিশিল্ড’ নামের ওই টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে সেরামের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। গত ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এ টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।

করোনা ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তির ধারা অনুযায়ী, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৬ মাসে বাংলাদেশকে ৩ কোটি টিকা দেয়ার কথা রয়েছে। প্রতিমাসে টিকা আসবে ৫০ লাখ করে। বাংলাদেশ সরকার জনগণকে বিনামূল্যে এ টিকা দেয়ার ঘোষণা আরও আগেই দিয়ে রেখেছে।

সারা দেশের মানুষকে করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে গণ টিকাদান শুরুর আগে সামনের সারিতে থাকা কর্মীদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি অ্যাপ চালুর চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। করোনা ভাইরাসের টিকা পেতে আগ্রহীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে পারবেন। এছাড়া ‘রিয়েল টাইম’ অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর