আজিজ কো-অপারেটিভের সম্পদ উদ্ধারে একাকার পরিচালনা পর্ষদ ও আমানত স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি

সময়: 9:11 pm - December 11, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 147 বার

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এন্ড ফাইন্যান্স ব্যাংকের বেদখল হওয়া সম্পদ উদ্ধারে এবার একত্রে মাঠে নেমেছে পরিচালনা পর্ষদ ও আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে গঠিত কমিটি। বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে, সম্পদ উদ্ধারে প্রথমিক ধাপ হিসেবে আজিজ কো-অপারেটিভ শপিং মলে প্রতিষ্ঠানটির নায্য পাওয়ায় না বুঝে দেওয়ায় কারান্তরীণ চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যসহ শপিং মলের কর্মকর্তাদের নামে একটি এজাদার দায়ের ও একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১১ জুলাইয়ে সিআইডির হাতে আটক হয়ে মানি লন্ডারিং ও প্রতারণা মামলাসহ অসংখ্য মামলায় জেলে রয়েছেন চেয়ারম্যান এম.তাজুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে আজিজ কো-অপারেটিভের দেশব্যাপী শাখা থেকে প্রধান কার্যালয়ে আসা আমানত তিনি ও তার অনুগত লোকদের মাধ্যমে শপিং মল,অটো ব্রিক্সস প্রজেক্ট তৈরি, জমি কেনাসহ নানাভাবে তছরুপ করে কানাডায় পাচার করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আসা টাকা যথা সময়ে ফেরত না দেওয়ায় বেশ সমস্যায় রয়েছে ওইসব শাখার কর্মকর্তা ও গ্রাহকেরা।

এদিকে, তাজুল ইসলাম জেলে যাওয়ার পর আজিজ কো-অপারেটিভের টাকায় নির্মিত চিটাগাং রোডস্থ আজিজ কো-অপারেটিভ শপিং মল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এনে তার মনোনীত কয়েকজন লুটপাট করছেন। সেখান থেকে আাজিজ কো-অপারেটিভ কোন হিসেব বুঝে পাওয়া বা কোন গ্রাহকে পাওনা টাকার পরিবর্তে দোকান বুঝে দিচ্ছে না।

এরমাঝে প্রতিষ্ঠানটি থেকে দুর্নীতির দায়ে বহিস্কৃত এস এম হারুনার রশিদ কয়েকজন ম্যানেজারকে ভুল পথে পরিচালিত করে পাওনা টাকা আদায় ও নতুন কমিটি করার কথা বলে চেয়ারম্যান জেলের যাওয়ার পর থেকে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় পরিচালিত কমিটিকে হয়রাণিসহ নানান ভাবে স্বাভাবিক কাজে বাধাগ্রস্থ করেছে । সম্প্রতি সমবায় অধিদপ্তর একটি এডহক কমিটি করে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলেও মহামান্য হাইকোর্টে মামলা পেন্ডিং থাকায় ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ারম্যানের মানি লন্ডারিং মামলায় পুলিশের একটি বিশেষ শাখায় জমা থাকায় দায়িত্ব বুঝে দেয়নি বর্তমান কমিটি।

এমতাবস্থায় করণীয় নিয়ে খুলনা ও রংপুর অঞ্চলের ১০ কর্মকর্তা নিয়ে ঠৈক করেন চলমান কমিটির সেক্রেটারি ও সিইও হারুন-অর রশিদ মজুমদার,পরিচালক অ্যাড, আরিফ রেজাসহ কয়েকজন। ওই বৈঠকে যোগ দেন প্রতিষ্ঠানটির আমনত স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল আলম রানা, সেক্রেটারি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হেলাল উদ্দিন,যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল হামিদ।

বৈঠকে আজিজ কো-অপারেটিভের কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয় শক্তিশালী করা, ম্যানেজমেন্ট শক্তিশালীকরণ, বেদখল সম্পদ উদ্ধার করে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করে প্রতিষ্ঠানের ইমেজ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানান।

বৈঠকে এসিসিএফ ব্যাংক আমানত স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম রানা বলেন, আমরা লিগ্যাল ফ্রেমে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আজিজের বেদখল সম্পদ রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সম্পদ উদ্ধারে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যা যা কিছু করা দরকার সবকিছু করবো।

তিনি বলেন, আমাদের আমানত ফেরতের কথা বলে আন্দোলনে করার নামে এস এম হারুন একটি ভুয়া কমিটি করে নিজেকে সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে নানান প্রতারণা করেছেন। যার বিরোধিতা করে আমিঅবৈধ ওই কমিটির সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে করেছি। এখন হারুন আমি ও আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির নেতাদের নামে মিথ্যাচারে লিপ্ত। তিনি বলেন, একজন প্রতারকের মিথ্যাচার কেউ বিশ্বাস করেন না। রফিকুল আলম রানা আরো বলেন, এসএম হারুনের প্রতারণার বিষয়ে আমরা অধিদপ্তরেও কথা বলেছি। সবাই তার ব্যাপারে নেগেটিভ।

তিনি বলেন, তাজুল ও তার সহযোগী এবং প্রতারক হারুনের বিরুদ্ধে আমরা আজ থেকে মাঠে নেমেছি একসঙ্গে।

এদিকে, এসিসিএফ ব্যাংকের সেক্রেটারি ও সিইও হারুণ অর রশিদ মজুমদার বলেন, আমাদেরকে একটি পক্ষ এতোদিন তাজুল ইসলামের সহযোগী বলে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু এখন এ কথার যে ভিত্তি নেই তা প্রমাণিত হবে। তিনি বলেন, এসএম হারুন ভুয়া কমিটি করা, প্রমোশন বাণিজ্য ও মিটিংয়ের নামে চাঁদাবাজি করে নিজেকে যা প্রমাণ করার করেছেন। তাকে যারা মাঠে নামিয়েছিল তারাই আজ সবকিছুর প্রমান দিচ্ছে। এস এম হারুন এখনো আমিসহ অনেকের নামে গ্রাহক বা আজিজের ম্যানেজারদের ভুল বুঝিয়ে মামলা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। তার প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকেরা কাজ করছেন।

তিনি বলেন, কোন ভেদাভেদ নেই সকলে মিলে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে হবে। এতোকিছুর পরেও আমরা আজিজের কাউকে দুরে ঠেলতে চায় না। তাজুল ইসলাম আজিজের টাকা দিয়ে শপিং করে বাটপারি ও নিজের নামে, ছেলেও ভাইয়ের যে জমি কিনেছেন তা উদ্ধারে সমবায় অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আজিজের অসহায় গ্রাহকের মাঝে ফিরিয়ে আনতে লডাইয়ে নেমেছি।

পরিচালক অ্যাডভোকেট আরিফ রেজা বলেন, আমরা কারো অন্যায়ের সহযোগী নয়। আজিজের সম্পদ রক্ষা করে গ্রাহকদের বাঁচানোর চেষ্টা করছি।

এদিকে, বুধবার বৈঠক শেষে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পরিচালক আরিফ রেজা তাজুল ইসলাম, শপিং মলের জিএম সাইফুল ইসলাম, অফিসার নুর মোহাম্মদ রাকিব, তাজুল ইসলামের স্ত্রী আফরোজা পারভীন, ভাই রফিকুল ইসলাম, ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীরের নামে একটি সাধথারণ ডায়েরী করেছেন। যার নং-৪২২।

আর আজিজ কো-অপারেটিভের সেক্রেটারি ও সিইও হারুন-অর রশিদ মজুমদার উপরোক্ত ব্যক্তিরা চেয়ারম্যান জেলে যাওয়ার পর কোন হিসেব না দিয়ে শপিং মলের টাকা লুটপাট করছেন এবং গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ায় থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। যার নং-৬৯৭৫। এদিকে, গ্রাহকেরা আরো কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

 

 

ভোরের পাতা/ভিআরথী

এই বিভাগের আরও খবর