গোল্ডেন মনিরের টাকার পাহাড় এর উৎস কী?

সময়: 7:13 am - November 23, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 57 বার
গোল্ডেন মনিরের টাকার পাহাড় এর উৎস কী?

ঢাকা: নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করা মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে গত শনিবার গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। লাগেজ ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাকারবারি, জাল-জালিয়াতি ও ভূমি দখলের মাধ্যমে এখন তিনি দুই শতাধিক প্লট ও হাজার কোটি টাকার মালিক।

গেল কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ২৫ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৯৩০ কোটি ২২ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন গোল্ডেন মনির। এর মধ্যে ৪১২ কোটি ২ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং ৫১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময় উত্তোলন করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা ঋণও নেন তিনি।

গেল অর্থবছরে (২০১৯-২০) আয়কর রিটার্নে তার সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়াও গত অর্থবছরে গোল্ডেন মনিরের বাৎসরিক আয় ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এবং তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউকের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাদের ব্যবহার করে নিজে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ২০২টি প্লট ও জমি দখল করে নেন গোল্ডেন মনির। তার বাসা থেকে ২টি এবং অটোকার সিলেকশন থেকে ৩টি অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়। হুন্ডির মাধ্যমেও দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেন।

মনিরের এই উত্থানের পেছনে যারা জড়িত ও সহযোগী তাদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন, ‘গোল্ডেন মনির দেশের বাইরে কি পরিমান অর্থপাচার করেছে বা কী পরিমাণ সম্পদ তার রয়েছে সে বিষয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করবো। তিনি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে কসমেটিকস পণ্য ও চোরাচালানির মাধ্যমে কি পরিমাণ স্বর্ণ দেশে এসেছিলেন সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুসন্ধান করতে অনুরোধ করবো। এদিকে অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি (প্রত্যকটি ৩ কোটি টাকা মূল্যের) আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটিকে (বিআরটিএ) অনুসন্ধানের জন্য আমরা বলবো। এছাড়াও সে জাল-জালিয়াতি করে ভুমি দখল করেছে সেসব বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) অনুসন্ধানের জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।’

তিনি বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের বাসায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি রাজউকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেসে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট ও জমি দখল করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩০ টি প্লট রয়েছে বলে সে স্বীকার করেছেন। আমরা আশা করছি, তদন্তে তার সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।’

গেল শনিবার (২১ নভেম্বর) মেরুল বাড্ডার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি, ৬০০ ভরি সোনা (প্রায় ৮ কেজি), ১০টি দেশের মুদ্রা ও এক কোটি ৯ লাখ টাকাসহ গোল্ডেন মনিকে আটক করে র‌্যাব।

এই বিভাগের আরও খবর