চাঁদাবাজির, অন্যতম হোতা রিজেন্টের সাহেদের স্ত্রী

সময়: 5:04 am - October 3, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 51 বার
চাঁদাবাজির, অন্যতম হোতা রিজেন্টের সাহেদের স্ত্রী

ঢাকা: রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলের নামে চাঁদাবাজি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশন- বিপিএ। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, বিপিএ’র বিভিন্ন অপকর্মের অন্যতম হোতা জালিয়াতি-প্রতারণায় আলোচিত মোহাম্মদ সাহেদের স্ত্রী।

আঠারো বছর আগে যাত্রা শুরু ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন সেবাদাতাদের সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএ’র। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।

২০১৮-তে বিপিএ’র নারী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে যোগ দেন রিজেন্টকাণ্ডে আলোচিত প্রতারক মোহাম্মদ সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া আরবী রিম্মি। তারপর সাহেদের তৎপরতায় ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন সেবায় জড়িত পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলের সদস্যপদ পায় বিপিএ। তারপর থেকেই লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখিয়ে ফিজিওথেরাপিস্টদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি শুরু করে সংগঠনটি।

ফিজিওথেরাপিস্ট ড. জাকারিয়া বলেন, ‘আমার কাছ এ ধরনের টেক্সট এসেছে এবং আমাকে ফোনেও এ ধরনের বিষয় বলা হয়েছে। বলেছে কাউন্সিল বাস্তবায়নের পেছনে খরচপাতির বিষয় আছে তো, তাহলে তোমদের এই ধরনের বিষয়ে কোন আপত্তি জানানো ঠিক হবেনা। কাউন্সিলের স্বার্থে এ ধরনের খরচ লাগতেই পারে। যেহেতু ফিজিওথেরাপিস্টের প্রাণের দাবি, এই ইমোশনটাকে পুঁজি করে নানা পদ্ধতিতে তারা চাঁদাবজিি করছে।’

বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে একটা এসএমএস আসলো যে কাউন্সিল উপলক্ষ্যে সবার কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা দিতে হবে। তিন হাজার সদস্য টাকা দিলে দেড় কোটি টাকা হয়। কাউন্সিল পারপাসে তারা কেন দেড় কোটি টাকা নিবে। কাউন্সিল তো তারা চালাবে না, চালাবে সরকার।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলের উন্নয়ন ফি সহ বিভিন্ন অজুহাতে বিশ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে বিপিএ। সংগঠনটির গোপন নথি অনুযায়ী, এক বছরেই কোটি টাকার ওপর চাঁদা আদায় হয়েছে।

বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. দলিলুর রহমান জানান, ‘বাংলাদেশ ফিজিও থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন নামে সংস্থাটি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে পেশাজীবি সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের কাছ থেকে কাউন্সিল কন্ট্রিবিউশন ফি সহ বিভিন্ন নামে চাঁদা দাবি করে আসছে যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিক। এ সংগঠণের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রদান করেছে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’

অন্যদিকে রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার ডা. আবু হোসেন জানান, সরকারি কাউন্সিলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে কাউন্সিল। কাউন্সিল কার্যক্রম বলতে যা বোঝায় এরকম কিছুই এখনো শুরু হয়নি। যারা করে তারা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। কোন কারণ নাই এটা পুরাই ভুয়া। কেনই বা তারা দেবে।’

চাঁদাবাজি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রতারণায় জড়িত বিপিএ। সামাজিক সংগঠন হয়েও পেশাজীবী সংগঠনের পরিচয় দিয়ে প্রতারণার দায়ে সংগঠনটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। বছর গড়ালেও সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহাদাৎ আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়কে ৬০ দিনের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট ডিভিশন। কিন্তু এরপরও ব্যবস্থা এখনো নেয়নি। তারা এটা ভায়োলেশন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে বিপিএ’র সাধারণ সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘একটা অর্গানাইজেশন চালাতে হলে টাকার দরকার হয়। সেটা তারা ডোনেট করতে পারবে না? তাদের অফিস আছে, বেতন আছে, খরচ আছে।’

এই বিভাগের আরও খবর