স্বাস্থ্য অধিদফতরের ছাপাখানা থেকেই মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস হতো: সিআইডি

সময়: 10:06 am - July 23, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 105 বার

ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের ছাপাখানা থেকেই মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হতো বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি জানায়, সন্দেহভাজন হিসেবে গত ১৯ জুলাই এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুরে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আরো ৫ জনকে। গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের মধ্যে ৩ জনকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার ক্রাইমের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস। এ সময় সাইবার ক্রাইমের ডিআইজি মো. শাহআলমসহ সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া মুন্নু, পারভেজ খান, জাকির হোসেন দিপু এবং সামিউল জাফর সিটু। গত ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মূলহোতা জসিম। তার কাছ থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয় পত্র, দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করেছে সিআইডি।

সিআইডি জানায়, প্রেসের মেশিনম্যান সালাম এবং তার খালাতো ভাই জসীম এ দুজন মিলে গড়ে তুলেছিলেন এ চক্র। দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করেছে সিআইডির তদন্তকারী দল।

সুমন কুমার দাস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কিংবা আমর্ডফোস মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়াটা মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটা স্বপ্ন। এ চক্রের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ওই মামলায় ১২৫জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। যারমধ্যে গ্রেফতারকৃত ছিল ৪৭ জন। এদেরমধ্যে ৪৬ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় তদন্ত করার সময়ে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি।

সুমন কুমার দাস আরও বলেন, ওই মামলার তদন্তের সময়ে গত ১৯ জুলাই এস এম সানোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সাইবার পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সানোয়ার ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। তার দেয়া তথ্যের উপরে সিপিসির একটি দল ওই দিন রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া মুন্নু, পারভেজ খান, জাকির হোসেন দিপু এবং সামিউল জাফর সিটুকে গ্রেফতার করে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপাখানা থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র টাকার বিনিময়ে ফাঁস করত। তাদের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় এজাহার নামীয় ১৪ জনসহ ১৫০ থেকে ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিআইডি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকে প্রশ্ন বের হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন কুমার দাস বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, ১৯৮৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে একটি প্রেস থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়। ওই প্রেসে চাকরি করে এমন সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো এসব কাজে যুক্ত থাকতে পারে।

এই চক্রের মূলহোতা জসিম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুর অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যা মানিলান্ডারিং মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।

এই বিভাগের আরও খবর