একজন সংগ্রামী স্বপ্নসারথির বিদায়

সময়: 8:16 am - July 14, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 47 বার
একজন সংগ্রামী স্বপ্নসারথির বিদায়

ঢাকা: যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল ছিলেন দেশের শিল্প খাতের একজন অনন্য এবং সফল উদ্যোক্তা। যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন ক্ষণজন্মা এই শিল্পোদ্যোক্তা। এক পা, দুই পা ফেলে এগিয়েছেন অনেক দূর। গড়েছেন বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি করেছেন লাখো মানুষের কর্মসংস্থান।

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জগতের বর্ণিল পুরুষ নুরুল ইসলাম বাবুল ১৯৪৬ সালের ৩ মে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার দোহারে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মাতৃভূমির রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যেমন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তেমনই যুদ্ধোত্তর দেশমাতৃকার অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য গভীর দেশপ্রেম নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন তার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো।

তিনি যেমন দেশকে ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন জন্মদাত্রী জননীকেও। দুই মায়ের প্রতিই তার ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। স্রষ্টা তাকে মায়ের প্রতি সেই ভালোবাসার প্রতিদানও দিয়েছেন অকুণ্ঠ হস্তে। তিনি যে শিল্পই গড়ে তুলতে চেয়েছেন, সেখানেই সফল হয়েছেন। একে একে গড়ে তুলেছেন প্রায় ৪১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবাখাতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। ইলেট্রনিক্স, বস্ত্র, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ টয়লেট্রিজ, নির্মাণ এবং আবাসন খাতে ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ।

এছাড়া গণমানুষের সুবিধা, অসুবিধা, বঞ্চনা ও অধিকারের বিষয় তুলে ধরতে তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। সত্যের সন্ধানে নির্ভীক স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা করে এসেছে পত্রিকাটি। গণমাধ্যমে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার মানসে তিনি চালু করেন যমুনা টেলিভিশন। তার অনুপ্রেরণায় ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কারণে অল্পদিনেই দেশের শীর্ষ টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে জায়গা করে নেয় যমুনা টেলিভিশন। সর্বশেষ করোনার চিকিৎসায় কুড়িলে ৩০০ ফিটের কাছে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে এর প্রাথমিক আলোচনাও শেষ করেছিলেন।

তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের এমপি সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেয়ে রোজালিন ইসলাম, মনিকা ইসলাম এবং সনিয়া ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।

করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার অনুদানও দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও করোনা মোকাবিলায় সহজ ও সুলভ মূল্যে যমুনা তৈরি করছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। গুণগত মানের দিক থেকে যমুনা গ্রুপ স্বাস্থ্যসম্মত পিপিই তৈরি করছে।

এ মহান স্বপ্নদ্রষ্টার প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শোক বার্তায় বলা হয়, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের কারিগর কর্মবীর নুরুল ইসলামের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন গনস্বাস্থের ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

শোক বার্তায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নে নুরুল ইসলামের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। একজন কৃতি ব্যবসায়ী হিসাবে তিনি মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও সমাজসেবামূলক নানা জনহিতকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। বিশেষকরে তিনি তার মেধা দক্ষতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা তার প্রতিষ্ঠিত যমুনা শিল্প গ্রুপে ৫০ হাজার মানুষ কাজ করছেন।’

দেশের এই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও গুণী মানুষটির ইহলোক ত্যাগে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গভীরভাবে শোকাহত। তিনি মরহুম নুরুল ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকার্ত পরিবারবর্গ, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। দোয়া করেন – মহান রাব্বুল আলামীন যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন।

কর্মজীবনে সফল এই মানুষটির চলার পথ ছিল নিরন্তর সংগ্রামের। জীবন ছিল সাহসের। কখনও তিনি সাহস হারাননি কোনো পরিস্থিতিতেই- তার দুটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দৈনিক যুগান্তর এবং যমুনা টেলিভিশন। দৈনিক যুগান্তরকে গত ২০ বছর বহু চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। কিন্তু নুরুল ইসলাম পিছু হটেননি এক পাও। একই ব্যাপার ঘটেছে যমুনা টেলিভিশন নিয়ে। দীর্ঘ ১২ বছর আইনি লড়াই চালিয়ে সম্প্রচারের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন যমুনা টেলিভিশনের। মাথা নোয়াননি, আপস করেননি। অথচ এই বারো বছরে প্রায় বারোটি টেলিভিশন বাজারে এসেছে। বছরের পর বছর যমুনা টেলিভিশনের কর্মীদের বসিয়ে বেতন দিয়েছেন যার নজির নেই এ দেশে- তবুও পিছু হটেননি নীতির প্রশ্নে।

মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের এমপি, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ পার্টির নেতাকর্মীরা। তারা মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমীর হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম শোক প্রকাশ করেছেন।

নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার এমপি, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জেএসডির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

রিয়েল অ্যাস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন নুরুল ইসলামকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় এভার কেয়ারের ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুদের নেতৃত্ব ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এর বাইরে চীনের ৪ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বাদ জোহর যমুনা ফিউচার পার্ক মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর