স্বামীর স্বীকারোক্তি, গ্রেফতার হতে পারেন সেই ডা. সাবরিনা!
ঢাকা: নমুনা পরীক্ষা না করেও জেকেজি হেলথ কেয়ারের করোনার ভুয়া রিপোর্টের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছিল বলে দাবি করেছেন কথিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।
ভয়াবহ এই অপকর্মে তার স্বামী জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরী কারাগারে যাওয়ার ২০ দিন পর ডা. সাবরিনা একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কাছে এমন দাবি করেছেন।
নমুনা ফেলে দিয়ে হাজারো মনগড়া করোনা রিপোর্ট দেয়ার প্রতারণা ফাঁসের পর সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান নন বলেও দাবি করছেন এখন।
তবে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্বামী আরিফুল জেকেজিতে সাবরিনার সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। শিগগিরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
মহামারি করোনা ভাইরাসের সন্দেহভাজন রোগীদের পরীক্ষার মনগড়া রিপোর্ট দেয়া নিয়ে এখন আলোচনায় ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। জঘন্য এই অপকর্মের অভিযোগে তার প্রতিষ্ঠানের সিইও ও স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ ৬ জন কারাগারে।
কিন্তু স্বামী আরিফ গ্রেপ্তারের পর থেকে প্রায় ২০ দিন ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছেন ডা. সাবরিনা। সবশেষ শনিবার সময় টিভির প্রতিবেদককে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এমনকি জেকেজির চেয়ারম্যান নন বলেও দাবি করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন সাবরিনা।
ডা. সাবরিনা বলেন, ‘জেকেজির চেয়ারম্যান হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং এটা ওভাল কোম্পানির একটি অঙ্গসংগঠন। ওভাল গ্রুপ ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এটির মালিক হচ্ছেন আরিফুর রহমান।’
দেশে করোনা মহামারির প্রকোপ শুরুর পর প্রায় ৩ মাস ধরে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার নামে প্রতারণা জেকেজি করে আসছিল সে কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নিতে দেখা গেছে সাবরিনাকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিজেকে চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন।
তবে এখন কেন পদ-পদবির কথা অস্বীকার করছেন প্রশ্নে ডা. সাবরিনা সময় টিভিকে বলেন, আমি ওনাকে (আরিফ) কাজ পাইয়ে দিয়েছি, দিতাম এটা পুরোপুরি মিথ্যে কথা। এখন অভিযোগ প্রমাণ হোক।
তবে পুলিশ বলছে, জেকেজির প্রতারণা থেকে সাবরিনার কোনোভাবেই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ তার স্বামী আরিফ চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাবরিনার সক্রিয় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে সাবরিনা জানান, জেকেজির করোনা রিপোর্ট প্রতারণার বিষয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকেও জানিয়েছিলেন। সাবরিনা বলেন, ‘আমি ডিজি ও এডিজিকে এ বিষয়ে জানিয়েছিলাম।’
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, ডা. সাবরিনার হাত ধরেই করোনার স্যাম্পল কালেকশনের কাজটি ভাগিয়ে নেয় জেকেজি। প্রথমে তিতুমীর কলেজে মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি মিললেও প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এবং অনেক জেলা থেকেও সংগ্রহ করা হয় নমুনা। সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে টেস্ট করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে জেকেজির যে চুক্তি ছিল তা বাতিল করা হয়েছে।
তবে তার এমন দাবির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের বক্তব্য নিতে পারেনি। একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, রিজেন্ট হাসপাতাল ও জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) প্রতারণার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত শনিবার সন্ধ্যায় পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর দাবি করেছে, হাসপাতাল দুটি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং এটা তারা ধারণাও করতে পারেননি।