বিশ্ব অর্থনীতির উত্তরণেই চোখ সবার

সময়: 11:32 am - June 8, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 58 বার
বিশ্ব অর্থনীতির উত্তরণেই চোখ সবার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছিল অর্থনীতিতে। অর্থ খাত প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে বড় মন্দার লক্ষণও কিছুটা কমে এসেছে। ফলে বিশ্বের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রণকৌশল এখন আত্মরক্ষার পরিবর্তে অর্থনীতির অগ্রসরতার রূপ নিয়েছে। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে তাদের সব পরিকল্পনা ছিল উদ্ধারকেন্দ্রীক। সেই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোই এখন অর্থনৈতিক উত্তরণের জন্য পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।

প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে করোনার বিস্তার রোধ ও বাজারের উলম্ব পতন ঠেকাতে লাখ লাখ কোটি কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তারা। আর এখন তারা অর্থ ঢালছে তার চেয়েও বেশি। তবে তা ভাইরাস বা বাজারের পতন ঠেকানোর জন্য নয়; বরং অর্থনৈতিক উত্তরণকে গতিশীল করার জন্য।

এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে সাহস জুগিয়েছে তা হলো, অর্থনীতি যতটা খাদে পড়বে বলে পূর্বানুমান করা হয়েছিল, ততটা না পড়ার লক্ষণ তৈরি হওয়া। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের গ্লোবাল জিডিপি গ্রোথ ট্র্যাকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে অর্থনৈতিক সংকোচনের বার্ষিক হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে এপ্রিলে এ হার ছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

জার্মানির ডয়েচে ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রধান অর্থনীতিবিদ টরস্টেন স্লোক বলেছেন, ‘প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে নীতিনির্ধারকরা হন্যে হয়ে অর্থনীতি বাঁচানোর উপায় খুঁজেছেন। এখন তারা অর্থনীতির উত্তরণের কথা চিন্তা করছেন। তারা বুঝতে পারছেন যে গৃহস্থালি ও ব্যবসা খাত বর্তমানে যে নগদ অর্থের সংকটে রয়েছে, তা সচ্ছলতা হারানোর রূপ নেয়ার আগেই যত বেশি সম্ভব আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।’

বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে নতুন দফায় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও কোম্পানিকে আর্থিক সহায়তা দিতে যে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিচ্ছে, তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবারই (৪ জুন) ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) তার সম্পদ ক্রয় কর্মসূচি ৬০ হাজার কোটি ইউরো (৬৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার) বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিমাণের পাশাপাশি ক্রয় কর্মসূচির মেয়াদও বাড়িয়েছে তারা। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে ইসিবি।

এদিকে জার্মান সরকার নতুন করে ১৩ হাজার কোটি ইউরোর আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া অ্যাঙ্গেলা মেরকেল প্রশাসন বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রস্তাবিত ৭৫ হাজার কোটি ইউরোর নতুন রিকভারি ফান্ডেও তারা সহায়তা দেবে।

শুধু ইউরোপই নয়, এশীয় সরকারগুলোও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছে। জাপান সরকার নতুন করে ১ লাখ ১ হাজার কোটি ডলারের ব্যয় কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে। দেশটির সরকার এর আগে কখনো এত বড় অংকের সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দেয়নি। ব্যাংক অব জাপান ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩০ লাখ কোটি ইয়েনের (২৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার) ঋণসহায়তা দিতে গত মাসে এক জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে।

চীন গত সপ্তাহে নতুন করে ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি ইউয়ান (৫০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার) ব্যয় পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ঘোষণা করেছে ৭৬ লাখ কোটি ওনের (৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার) ‘নিউ ডিল’ প্যাকেজ, যা এখন পর্যন্ত দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ।

মার্কিন আইনপ্রণেতারাও আরো বেশি পরিমাণে আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি মেইন স্ট্রিট লেন্ডিং প্রোগ্রাম নামে নতুন একটি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি এরই মধ্যে দেশটির অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থায় লাখ লাখ কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে।

১০ জুন ফেডের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসবে কিনা, সে বিষয়ে ফেড কর্মকর্তারা আগে থেকে কোনো ইঙ্গিত না দিলেও অনেক অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি চলতি বছরের বাকি সময়টায় মুদ্রানীতি শিথিল রাখার প্রতিশ্রুতি আরো পাকাপোক্তভাবে দেবে।

এই বিভাগের আরও খবর