সীমান্তে ‘একপেশে’ হত্যা, নতজানু সরকার ‘প্রতিবাদহীন’: রিজভী
ঢাকা: সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের একপেশে হত্যাকাণ্ড বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের কোনও পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার এতই নতজানু যে সীমান্তে একপেশে হত্যাকাণ্ড চলছে, অথচ সরকার হত্যার প্রতিবাদ করতে পারে না। উল্টো বিএসএফ’র (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) গুলিতে নিহত বাংলাদেশিদেরই অভিযুক্ত করছে সরকার।’
রবিবার (৫ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা ঘরে বসে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দেশ চালাচ্ছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছেন। করোনায় সয়লাব জনগণ কী মরণদশায় ভুগছে এগুলি উপলব্ধি করার ক্ষমতা তাদের নেই। যদি থাকতো তাহলে করোনা পরীক্ষার ওপর ২০০ টাকা ফি ধার্য করতো না, এই মহামারির মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতো না, বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলের দাপটে সাধারণ মানুষের দম বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো না, পাটকল বন্ধ ও পাটশ্রমিকদের ছাঁটাই করতো না।’
তথ্যমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘গতকাল তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘জনগণের পাশে না থেকে ঘরে বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করছে বিএনপি নেতারা। প্রতিদিন ঘরে বসে শুধু সমালোচনা করে।’ তথ্যমন্ত্রীর মতো উদ্ভট ও ডাহা মিথ্যা কথা বলার মতো লোক বাংলাদেশে আর কতজন আছেন তা আমার জানা নেই। তার চোখে-মুখে মিথ্যার ঝলক বেরিয়ে আসে। তথ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই- আপনাদের মন্ত্রী-এমপি’রা কে মাঠে আছে, কে জনগণের পাশে আছে?’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো দেখছি- আপনাদের এমপি মানবপাচারের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে গ্রেফতার হচ্ছে। অবশ্য জনগণ দেখছে আপনাদের জনপ্রতিনিধিদের খাটের তল থেকে, মাটির তল থেকে, গ্যারেজের ভেতর থেকে শুধু চালের বস্তা, তেলে বস্তা বের হচ্ছে। এগুলি জনগণের টাকায় কেনা সরকারি ত্রাণ। আর আপনাদেরকে দেখছি সেলফ লকডাউনে থেকে বিরোধী দল ও মতের মানুষদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে। আপনাদের মন্ত্রী-এমপি’রা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীরা এই দুঃসময়ে বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে কোটি কোটি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের হত্যা করছে বিএসএফ। বাংলাদেশের ভেতর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনও চালায় বিএসএফ। গত তিন মাসে তারা ২৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। গত ২ জুলাইও তারা একজনকে হত্যা করছে। গতকালও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় মানসিক ভারসাম্যহীন জাহাঙ্গীর আলমকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ভয়ঙ্কর অমানবিক মনুষ্যত্বহীন ঘটনা দেশবাসীকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার টু শব্দটি পর্যন্ত করে না। এই বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী চুপ কেন?’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারের কোনও পদক্ষেপ নেই। নতজানু সরকার কোনও প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে এই একপেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশিরা। বর্তমান সরকার কতটুকু নতজানু যে, এর আগেও আমরা দেখেছি। বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা বিএসএফ’র হত্যাকাণ্ডের কোনও প্রতিবাদ না করে বরং তাদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশিদেরই অভিযুক্ত করেছে। গত তিন মাসে বিএসএফ কর্তৃক সকল বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকা শহরে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছে না। সবাই ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষরা করোনার আঘাতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর ওপর বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানি তেলের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন ওষ্ঠাগত। শ্রমিক ছাঁটাই আর চাকুরিচ্যুতির হিড়িক পড়ে গেছে দেশব্যাপী। চাকুরি হারিয়ে আত্মহত্যা করছে মানুষ। এক নজীরবিহীন সংকটের মধ্যে পড়েছে মধ্য ও স্বল্প আয়ের মানুষ। সরকারের লোকেরা এই সংকটগুলোর দিকে নজর না দিয়ে জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিরোধী দলের ওপর ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ শুরু করেছে। সেখানে শুধু মিথ্যা কথার ফুলঝুরি নয়- চলছে গুম, মিথ্যা মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের হিড়িক।’
ভিডিও কনফারেন্সে রিজভী বলেন, ‘আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আবারও আপনাদের জানাচ্ছি- আমার নামে কোনও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। আমি কোনও ফেসবুক পরিচালনা করি না। কিন্তু কতিপয় অসাধু ও প্রতারক ব্যক্তি আমার নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করছে। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’