ভারতীয় বন্দরগুলোয় আটকানো হচ্ছে চীনা পণ্য

সময়: 6:59 am - July 1, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 88 বার
ভারতীয় বন্দরগুলোয় আটকানো হচ্ছে চীনা পণ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের বন্দরগুলোয় চীন থেকে আমদানীকৃত পণ্যের পাহাড় জমছে। কারণ দেশটির সরকার সেগুলো খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না। ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনার পর যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা-ই হলো। শেষ পর্যন্ত সাপ্লাই চেইনকেও এর জের টানতে হচ্ছে। ফলে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে ভারতের অর্থনীতিতে। খবর ব্লুমবার্গ।

ভারতের ওষুধ খাতের কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) থেকে শুরু করে জনপ্রিয় মোবাইল ফোনগুলোর যন্ত্রাংশ—দেশটির উৎপাদকরা প্রায় সবই আমদানি করেন চীন থেকে। দুই দেশের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় তাদের আমদানীকৃত কাঁচামালগুলোও আটকা পড়েছে বন্দরে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঠিক কী কারণে চালান ছাড় করা হচ্ছে না, তা আমদানিকারকদের সুনির্দিষ্টভাবে জানানোও হচ্ছে না।

ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান দিনেশ দুয়া বলেছেন, ‘কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চীন থেকে আসা চালানগুলো ছাড় করছেন না। কেন এসব চালান ছাড় করা হচ্ছে না, তারও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না তারা। পাঁচদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। বর্তমানে আমরা একেবারে অসহায় অবস্থায় রয়েছি। কারণ চীন ছাড়া বিকল্প উৎসও নেই আমাদের।’

নেক্টর লাইফসায়েন্সেস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দুয়া জানান, ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বর্তমানে কোনো কারণ ছাড়াই প্রতিদিন সাড়ে ৩ লাখ রুপি ডেমারেজ চার্জ গুনতে হচ্ছে। এ অচলাবস্থার সুরাহার জন্য তিনি ওষুধ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠালেও কোনো কাজ হয়নি।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদকরাও। বন্দর থেকে যন্ত্রাংশ ছাড় করা না হলে তারা আর কতদিন উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারবেন, সে বিষয়েও সন্দিহান। আর এমন এক সময়ে এ সংকট তৈরি হলো, যখন করোনা ভাইরাসের লকডাউন শেষে মাত্রই উৎপাদনে ফিরতে শুরু করেছে কারখানাগুলো।

চীন থেকে আমদানীকৃত কাঁচামাল ছাড়করণ না হলে ভারতীয় উৎপাদকরা অনেকটাই বিপাকে পড়বেন। কিছু পরিসংখ্যান দেখলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ভারত তাদের মোট বাল্ক ড্রাগ ও ইন্টারমেডিয়েটের ৭০ শতাংশই চীন থেকে আমদানি করে। দেশটিতে উৎপাদিত ইলেকট্রনিক পণ্যের ৩৭ শতাংশ, কনজিউমার ইলেকট্রনিকস পণ্যের ৪৫ শতাংশ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ও রেফ্রিজারেটরের ৪৪ শতাংশ যন্ত্রাংশ চীন থেকে আসে।

ভারতের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে চীনের সঙ্গেই। গত বছর তারা চীন থেকে প্রায় ৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। বিপরীতে রফতানি করেছে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য।

ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, সীমান্ত দ্বন্দ্বের যে রেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে পড়েছে, তাতে আখেরে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে ব্যবসা খাতকেই। স্বনির্ভর ভারত বিনির্মাণে জোর দেয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন এখন কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপের দিকে ঝুঁকছে। এছাড়া তারা চীন থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে। মোদি প্রশাসন এতই চীনবিদ্বেষী হয়ে উঠেছে যে সোমবার জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ৫৯ চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে তারা।

এদিকে ভারতের এমএসএমই খাতবিষয়ক মন্ত্রী নিতিন গডকরি রবিবার বলেন, চীন থেকে আমদানীকৃত পণ্য দেশের বন্দরে আটকে দেয়ায় সেসব ভারতীয় ব্যবসায়ী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যারা সীমান্তে উত্তেজনা শুরুর আগেই কার্যাদেশ দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর