দরিদ্রদের ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় স্বদেশ করপোরেশন আটক চেয়ারম্যান জিএম!
ঢাকা: প্রতারণার করে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে স্বদেশ করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও জিএমকে আটক করছে র্যাবের ভ্রম্যমান আদালত। ঋণের প্রলোভনে দরিদ্রদের ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় স্বদেশ করপোরেশন ঋণ দেয়ার কথা বলে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪-৫ হাজার জনের কাছ থেকে জামানত হিসেবে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বদেশ করপোরেশন। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের চাপে হাতিয়ে নেয়া জামানতের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার নামেও এ প্রতিষ্ঠান করেছে চেক জালিয়াতির প্রতারণা। জামানতের টাকা ফেরানোর নামে যে চেক গ্রাহকদের দেয়া হয়, সেই অ্যাকাউন্টে বিগত দুই বছরে কোনো লেনদেন হয়নি, নেই কোনো টাকাও। এছাড়া করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মজুত ও বিক্রি করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।
আজ বুধবার বিকালে স্বদেশ করপোরেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল কবীর ও মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। রাজধানীর মতিঝিলে মধুমিতা সিনেমা হল সংলগ্ন সমবায় ব্যাংক ভবনের পঞ্চম তলায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে দুজনকে ধরা হয়। পরে সেখানে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সাইফুল কবীরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং আড়াই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।
র্যাব মিডিয়া সেন্টারের সহকারী পরিচালক এএসপি সুজয় সরকার অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
র্যাব জানায়, সাইফুল কবীর ও শফিকুল ইসলামসহ প্রতারণায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হবে।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতারণার করে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে প্রথমিক ভাবে স্বদেশ করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও জিএমকে আটক করা হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে বিভিন্ন ধারায় সাইফুল কবীরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড, আড়াই লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলার আলামত হিসেবে প্রাপ্ত অননুমোদিত জিনিসপত্র জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে নিয়মিত মামলা করা হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, স্বদেশ করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইফুল কবীর সরকারের কোনো অনুমোদন ছাড়া তার প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ দেয়ার কথা বলে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লোক নিয়োগ দেন। বিশেষ করে তরুণদের মধ্য থেকে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তাদের কোনো নিয়োগপত্র পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
‘মৌখিকভাবে যাদের নিয়োগ দেয়া হতো তাদের গ্রাহক ধরে আনার কঠিন টার্গেট দিয়ে মাঠে নামাতো স্বদেশ করপোরেশন। মাঠে গিয়ে তারা লোকজনদের জামানতের বিনিময়ে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ ঋণ পাওয়ার প্রলোভন দেখাতো। এতে সমাজের দরিদ্র ও নিম্ন শ্রেণির লোকজন ৫০ হাজার থেকে এক লাখ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত দিতে থাকেন। এভাবে প্রলোভন দেখিয়ে সারাদেশের ৪-৫ হাজার লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় স্বদেশ করপোরেশন।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু আরো বলেন, জামানতকারীরা যখন ঋণের জন্য ঘুরতে থাকেন, তখন এড়িয়ে চলতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও ঋণ না পেয়ে গ্রাহকরা জামানত ফেরত চাইলে তা দেয়ার নামেও নতুন প্রতারণা শুরু করে স্বদেশ করপোরেশন। জামানতের টাকা ফেরতের নামে তারা গ্রাহকদের চেক দেয়। কিন্তু চেক যে অ্যাকাউন্টের বিপরীতে দেয়া হয়, সেই অ্যাকাউন্টে দুই বছরে কোনো লেনদেনের রেকর্ড নেই এবং কোনো টাকাই সে অ্যাকাউন্ট ছিল না। এভাবে অসংখ্য গ্রাহক তাদের এই প্রতারণায় ভোগান্তিতে পড়েন।
র্যাবের অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশে স্বদেশ করপোরেশনের ২২টির মতো শাখা রয়েছে। ৪-৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তারা এরকম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ১৫-২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকে বেশকিছু জিনিসপত্র জব্দ করেছি, যেগুলোর কোনো অনুমোদন নেই।
তিনি বলেন, অভিযানের একপর্যায়ে আমরা দেখলাম স্বদেশ করপোরেশনের কার্যালয়ের একটি কক্ষে অবৈধভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মজুত করা হয়েছে, যেগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন নেই। সেখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ফ্লোর ক্লিনার। এছাড়া সেখানে অরেঞ্জ জুস ও মশার কয়েলের প্রচুর খালি প্যাকেটও পাওয়া যায়।
ভোরের পাতা২৪.কম/ভিআথি