ডেভলপার কোম্পানির অভিনব প্রতারণায় নিঃস্ব অনেকে

সময়: 6:42 am - August 20, 2023 | | পঠিত হয়েছে: 629 বার
ডেভলপার কোম্পানির অভিনব প্রতারণায় নিঃস্ব অনেকে

আরিফুল  রহমান তুহিন/ঢাকা: ডেভেপলার প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স এর নামে অভিযোগ উঠেছে তারা অন্যের জমি ঘরবাড়ি দখল করেছে। এই ডেবলপার মালিক ব্যবসার নামে দখলে রেখেছে শতকোটি টাকার সম্পদ। ভুক্তভুগিদের অভিযোগ, নিজের জমি, নিজের বাড়িঘর অথচ, প্রবেশের সামর্থ্য নেই। বছরের পর বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও নিজ আবাসে যেতে পারছেন না ভবনমালিকরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে, ডেভেলপারের মুখোশের আড়ালে চুক্তির নামে দখলে নেয়া হয়েছে জমিসহ এসব ভবন। প্রতারনা করেছে ডেভেপলার প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স। এই কোম্পানির বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।

জানা যায়, গুলশান ২ নম্বরের ৯৯ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসা। এই ভবনটি ১৯৬৬ সালে রাজউক থেকে কিনে নেন গুলশানের বাসিন্দা প্রয়াত হামিদা খাতুন। ১৮ কাঠা ২২ শতাংশের জমিটিতে শেষ সম্বল দিয়ে ছয়তলা ভবনও নির্মান কাজ শুরু করেছিলেন ২০০৭ সালে। ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা লোন নিয়ে আর্থিক টানাপোড়েনের পরও ভবন নির্মান শেষ হয় ২০১১ সালে। এরপরও আনুসঙ্গিক কাজ শেষ করতে আস্থা রেখেছিলেন ইনডেক্স ডেপেলপার লিমিটেডের উপর। সেসময় প্রতিষ্ঠানটির কর্নধার জাহিদুল ইসলাম খানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়।

প্রয়াত হামিদা খাতুনের পরিবার দাবি করেন, চুক্তি অনুযায়ী ছয়তলা ভবনটির সামগ্রিক কাজ শেষ করতে আরো ৫ কোটি টাকা লাগবে বলে জানায় ইনডেক্সের জাহিদ। সেসময় হামিদা খাতুন এবং জাহিদ চুক্তি করে যে, এই খরচ জাহিদের প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স ডেভেলপার বহন করবে। তবে এই ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে আট বছর ভবনটিকে ভাড়া দিবে ইনডেক্স।

জানা যায়, ইনডেক্স কোম্পানি সংগৃহীত ভাড়া থেকে প্রতিমাসে কেটে নেয়া হবে ৫ লাখ টাকা। একইসাথে হামিদা খাতুনকে দেয়া হবে নগদ আরো সাড়ে তিনলাখ টাকা। চুক্তি হলেও একের পর এক তা লংঘন করেছে ইনডেক্সের জাহিদ। সে মূল ভবনমালিককে ভাড়ার টাকা তো দেয়ই নাই বরং ভবনটি দখলে রেখেছে প্রায় চার বছর ধরে।

এদিকে এসব বিষয়ে নিয়ে থানা, পুলিশ, আদালত গিয়েও প্রতিকার মেলে নি হামিদা খাতুনের পরিবারের।ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সের এমন আরো ঘটনা রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। উত্তরাতেও আছে ইনডেক্সের প্রতারতার শিকার আরও অনেক পরিবার।

২০১৩ সালে লাবনী রহমান নামের এক নারীর থেকে জোর করে দখলে নেয় প্রায় সাত কাঠার একটি প্লট। ভুক্তভোগী লাবনী জানায়, পঁচিশ লাখ টাকায় নিজের ৫ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর সড়কের পাশে দুই কাঠা জমি বিক্রি করার জন্য ইনডেক্সের জাহিদের সাথে আলোচনা করে। সেসময় জাহিদ জমির বায়না হিসেবে দশ লাখ টাকা দিয়ে সাত কাঠার প্লটের পুরোটাতেই সীমানা তুলে দখলে নেয়। এরপর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও প্রতিকার মেলে নি লাবনীর।

ডেভলপার কোম্পানির অভিনব প্রতারণায় নিঃস্ব অনেকে

এছাড়া , উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শরিফ আহমেদ। তার ৮ কাঠা জায়গায় ভবন নির্মানের নামে দখল ২০১৩ সালে। পারওয়ার অফ এটর্নী নিয়ে এখন পর্যন্ত দখলে রেখেছে জাহিদ।

এছাড়াও উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে ৩ কাঠা জমির মালিক এনায়েত হোসেন। ভবন নির্মানের নামে ১৩ বছর ধরে দখল করে রেখেছে এই জাহিদ।

এভাবে সাধারন মানুষের থেকে কোটি টাকা মেরে দিয়েছে প্রতারক জাহিদ ইনডেক্স গ্রুপের মাধ্যমে। অভিযোগ আছে বেশ কয়েকজন মিলে অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা দিয়ে গাজিপুর রাজেন্দ্রপুরে সালাদা রিসোট নামের একটি রিসোট নির্মান করছেন সে।

এদিকে খোজ নিয়ে জানা যায়, এছাড়া ১৪ নম্বর সেক্টরের ২২ নম্বর রোডে জমি দখল করে কুকুরের খামার করেছে প্রতারক জাহিদ। তবে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে প্রতিষ্ঠানটির সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মেলে নি কোনো কোন উত্তর। ব্যবসার আড়ালে জাহিদের দখল বানিজ্যের মাসলম্যান হিসেবে সবসময় কাজ করেছে তারই বন্ধু ইলিয়াস মৃধা। কখনো রাজনৈতিক শেল্টার, কখনো প্রশাসন ম্যানেজ, কখনো আদালতে সামলানো সবই করেছে এই ইলিয়াস।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলামকে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কথা বলতে চান নাই।

 

ভোরের পাতা/আসিস

এই বিভাগের আরও খবর