জোরজবস্তি ও প্রতারণা করে মুক্তিযোদ্ধা চাচার বসতভিটা দখলের চক্রান্ত!

সময়: 6:48 am - May 18, 2023 | | পঠিত হয়েছে: 84 বার
বড় শ্রেণীর মানুষের পরিচয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশান সম্পত্তি দখলের পায়তারা!

টাঙ্গাইল: এলাকাবাসীর কাছে শেখ পরিবারের স্বনামধন্য ব্যক্তি শেখ সেলিম এবং তার ছেলে শেখ ফাহিমের রেফারেন্স এর কথা বলে এবং সেটাকে মিথ্যা শক্তিতে রূপান্তিত করে মুক্তিযোদ্ধা চাচার বসতভিটা দখলের চেষ্টা করছে তার আপন ভাতিজা রোকনুজ্জামান ও তার গ্যাং। রোকনুজ্জামান মুক্তিযোদ্ধা চাচার পরিবারকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। যার কারণে নিরাপত্তার সংকটে পড়েছে মো: শাহজাহানের ছেলে-মেয়ে ও পরিবার।

জানা যায়, রোকনুজ্জামান বনানীর একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করেন। সেখানে তার (বসের) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ পরিবারের পরিচয় আছে এমনটাই জানিয়ে এবং মৌখিকভাবে নিজে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনি চাচার জমি দখলের পায়তারা করছেন। স্থানীয় একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জমি দখলের জন্য প্রতারণার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন শেখ পরিবারের ভিজিটিং কার্ড এবং তা ফটোকপি করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে তা প্রচার করেছে। ওইসব কার্ড দেখিয়ে তিনি স্থানীয় কিছু লোকজন হাতে নিয়ে এসব অপরাধ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং গ্রামবাসীকে তাদের ভিজিটিং কার্ডের ফটোকপি করে দেখাচ্ছেন সেই সঙ্গে তার বাবাও এসব ভিজিটিং কার্ড এর ফটোকপি করে গ্রামবাসীকে বিভ্রান্ত করছেন।

রোকনুজ্জামান ও তার বাবা আব্দুল করিমের এমন কার্যক্রমের কারণে গ্রামবাসী ফটোকপি করা কার্ড দেখে তাদের উপর বেশ বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। অনেকেই রোকনুজ্জামানকে প্রতারক হিসেবে ধারণা করছেন এবং তারা বলছেন চাচার জমি অন্যায়ভাবে দখল করে নেওয়ার জন্য সে এসব প্রতারণা করছে। তথ্য মতে, অভিযুক্ত প্রতারক রোকনুজ্জামান সম্প্রতি কার্ডের মুলকপি ও ফটোকপি করে স্থানীয় কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র ও এমপির কাছে দেখানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তার এসব প্রতারণা বুঝতে পেরে বিষয়টি আমলে নেননি।

জানা যায়- রোকনুজ্জামান মানুষের মাঝে ক্ষমতার আতঙ্ক জানান দিয়ে বা সৃষ্টি করে তার মুক্তিযোদ্ধা আপন চাচার জমির দখলের মিশন নেওয়ার জন্য এই পথ বেছে নিয়েছে।
জানা যায়, টাঙ্গাইল-৪ আসন এলাকা কালিহাতী থানার উত্তর চামুরিয়া গ্রামের মরহুম বছীর উদ্দিনের কনিষ্ঠ পুত্র মোঃ আব্দুল করিম এর একমাত্র সন্তান রোকনুজ্জামান। এর আগে তিনি এমন প্রতারণা অনেকের সঙ্গেই করেছেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে সে শেখ পরিবারের সদস্যদের নাম, পদবী, ক্ষমতা এবং অফিসিয়াল ভিজিটিং কার্ড প্রদর্শন করে গ্রামের লোকদের মধ্যে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ওয়ারিশান সম্পত্তি ভাগ বন্টনের বিষয়টিকে নিজের পক্ষে প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ভিজিটিং কার্ড প্রদর্শনের বিষয়টি যা অন্যতম বলে দাবি করছেন অনেকেই।
এসব অসৎ উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত (রোকন) ব্যক্তি ইতোমধ্যে এ এলাকার সংসদ সদস্য সোহেল হাজারীর সঙ্গে দেখা করেন এবং ওয়ারিশান সম্পত্তি বন্টন বিষয়ে অসত্য তথ্যের মাধ্যমে সংসদ সদস্যকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে সোহেল হাজারী প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর রোকনুজ্জামানকে ধমক দেন এবং এইরূপ ধৃষ্টতা যাতে আর দেখাতে না আসে সেই জন্য কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেন।

এই বিষয়ে সোহেল হাজারী গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, তার নাম রোকনুজ্জামান কি না সেটা আমার মনে নেই। আমি তার বিষয়ক খোঁজখবর নিয়ে তাকে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি এবং বলেছি কোনো মানুষের ভিটা মাটি দখল করে দেওয়া আমার কাজ না। আমি সকলের জনপ্রতিনিধি।

জানা যায় যে, ওয়ারিশান সম্পত্তি বন্টনের বিষয়ে মরহুম বছির উদ্দিনের তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে অনেক আগে থেকেই নিজ নিজ অংশের স্থান অলিখিতভাবে মীমাংসিত ছিল। সেই মোতাবেক তার দ্বিতীয় পুত্র মরহুম আব্দুল হালিম পৈত্রিক ভিটার পশ্চিম পার্শ্বে দালান কোঠা নির্মাণ করেন।স্বভাবতই মৃত বছির উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মোঃ শাহজাহান (মুক্তিযোদ্ধা) এর নির্ধারিত স্থান ছিল ভিটার উত্তর পার্শ্বে তার ঘর সহ। যেহেতু পৈত্রিক ভিটার ঠিক পূর্বপার্শ্বে তার নিজ নামে ক্রয় করা সম্পত্তি রয়েছে এক দাগে বারো ডেসিমাল এবং তার স্ত্রী ও পিতা-মাতার কবরও রয়েছে জায়গাটিতে। সেই কবর সহ জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন রোকনুজ্জামান ও তার পিতা আ: করিম। তিনি বড় ভাইয়ের কাঁধের উপর ভর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বড় ভাইয়ের আশীর্বাদেই তার আজ ব্যাংকের চাকরি হয়েছে বলে গ্রামবাসীর দাবি। অবশেষে তার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা মো: শাহজাহানকে বিভিন্নভাবে অপমান অপদস্ত করছে এবং ভয় ভীতি দেখিয়েছে এমনকি জীবননাশের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে এ জমি দখলের কারণে।
তথ্য মতে জানা যায়, আব্দুল করিমের নিজস্ব কেনা সম্পত্তি রয়েছে পৈতৃক ভিটার দক্ষিণ পার্শ্বে। সঙ্গত কারণেই তার ঘর দেবার কথা ছিল পৈতৃক ভিটার দক্ষিণ পার্শ্বে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি মীমাংসিত অবস্থাতেই ছিল। যে কারণে মৃত আব্দুল হালিম জীবিত থাকা অবস্থায় এসব বিষয় নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব কারো মধ্যেই ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আব্দুল করিম মীমাংসিত বিষয়টির খেলাফ করার কারণে এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। রোকনুজ্জামান ভাগীদার নয় জায়গাটি তার বাবার।

দ্বন্দ্বের জের ধরে মো: শাহজাহান সাহেবের উল্লেখিত ভাগের জমিটি এখন জোরপূর্বক এবং যেকোনো মূল্যে মো: শাহজাহানের নির্ধারিত স্থানটি দখল করে নিজেই ঘর তুলতে চাইছে অভিযুক্তরা। ঘর তুলতে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বাদি হলে তাকে এবং তার ছেলে-মেয়েকে মারধরের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন রোকনুজ্জামান ও তার বাবা করিম।সেই সঙ্গে তার বড় ভাই এবং তার সন্তানদেরকে মানসিকভাবে লাঞ্ছিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পায়তারা, ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। এইরকম অন্যায়, জুলুম এবং হিংসাত্মক আচরণ করার জন্য সে তার ছেলে রোকনুজ্জামানকে হাতিয়ার স্বরূপ ব্যবহার করছে।গ্রামবাসীর অভিযোগ, পারিবারিক কলহের কারণে মুক্তিযোদ্ধা মো: শাহজাহানের পরিবারের অনেকটা ক্ষতি হতে পারে।রোকন ও তার বাবা যেভাবে তাদের চাপাচাপি করছে, যে কোন সময় তারা বড় ধরনের ক্ষতির সংকটে পড়তে পারেন।
গ্রামবাসীর দাবি, এই ঘটনার মূল খলনায়ক করিম। তিনি তার বড় ভাই মো: শাহজাহানের জন্য নির্ধারিত স্থান দখল করে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করার জন্য তার আরেক ভাই মরহুম আব্দুল হালিমের জ্যেষ্ঠ পুত্র তাইফুর রহমান ওরফে রাসেল গংদের সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। অথচ একটি বারের জন্যও তিনি মোঃ শাহজাহানের সাথে হিংসাত্মক মনোভাব ত্যাগ করে কোন শান্তিপূর্ণ আলোচনায় বসেননি বরং অসুস্থ বড় ভাইকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।

বড় ভাই মো: শাহজাহান তার ভিটাবাড়ি রক্ষা করার জন্য এরই প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে গেল ২৬ শে এপ্রিল ২০২৩ কালিহাতি পৌরসভার মেয়র অফিসে বাদী হয়ে মোঃ আব্দুল করিম, রোকনুজ্জামান এবং তাইফুর রহমান রাসেল গংদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন (অভিযোগ নং ২২৬)।

মেয়র অফিসে অভিযোগের পর, বিষয়টি মেয়র আমলে নেন। মেয়র ঘটনাটি আমলে নেওয়ার কারণে অপরাধীরা স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধিকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। তবে মেয়র এসব বিষয়ে অনেকটা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন এবং সতর্ক আছে বলে মেয়র অফিসের বিভিন্ন তথ্য মতে এসব জানা গেছে।
ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়র রাসেল গংদের সঙ্গে করে করিম এবং তার পুত্র রোকনুজ্জামানকে নিয়ে পারিবারিক একটি আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মো: শাহজাহান ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে চাচাতো ভাই রোকনুজ্জামান ও তার গ্যাং এর লোকজনের কারণে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। এজন্য তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।

ভোরের পাতা/টাঙ্গাইল প্রতিনিধি/সদর

এই বিভাগের আরও খবর