শেখ হাসিনা ও তার সরকারের এখন ডুবু ডুবু অবস্থা: রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের ধ্বনি চারদিকে বাজছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন সেই শহীদ রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে গতকাল একটি মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলাটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে? কারণ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের এখন ডুবু ডুবু অবস্থা। শেখ হাসিনার বিদায়ের ধ্বনি চারদিকে বাজছে। উনি এখন ক্ষমতায় থাকার জন্য যেনতেনভাবে চেষ্টা করবেন।
শুক্রবার (১২ মে) বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ঢাকা-১২ আসনের নেতা যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা-১২ আসন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।
রিজভী বলেন, সেদিন কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে সাইফুল আলম নীরবের সঙ্গে দেখা হলো। শুধুমাত্র এই কথাই বলল, ‘রিজভী ভাই আমাকে ২৪ ঘণ্টা লকাপে রাখা হয়।’ কেন সাইফুল আলম ২৪ ঘণ্টা লকাপে রাখা হয়? জেলখানাই তো একটা লকাপ। আবার জেলের মধ্যেই নিষ্ঠুর জেল। সে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে পারবে না, শ্বাস নিতে পারবে না, কারাগারের মধ্যে মুক্তভাবে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। কী অপরাধ করেছে সে? সে তো ক্যাসিনো চালায়নি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেনি।
আইজি প্রিজনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি সেনাবাহিনীর লোক, প্রধানমন্ত্রীর এসএসএফের দায়িত্বে ছিলেন। আপনি কারাগারে অনেক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। কারাগারে অনেকের কাছে বাইরে থেকে অনেক কিছু যায়। যারা ডাকাত, প্রকৃত সন্ত্রাসী, তারা অনেক সুযোগ পায়। আর আমাদের বাসা বাড়ি থেকে যদি খাবার যায়, আপনি (আইজি প্রিজন) সেটাও ঢুকতে দেন না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনি আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার। আপনি আর কী চান? আপনি প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে চান। দেখুন প্রধানমন্ত্রী, আমি (আইজি প্রিজন) বিএনপির নেতাদের কী ধরনের নির্যাতন করি। তাহলে আপনার বোধ হয় প্রমোশন হবে। আপনি প্রমোশনের আশায় কারাগারে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে বিএনপির মহাসচিবসহ জাতীয় নেতাদের কথাবার্তা দেখেন ও শোনেন। এই নিপীড়ন তিনি (আইজি প্রিজন) চালাচ্ছেন। সাইফুল আলম নীরব সেই নিপীড়নের অংশ। কারণ আপনার ভালো পোস্টিং দরকার, পদোন্নতি দরকার।
রিজভী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেই এলাকায় নির্বাচন করে, সাইফুল আলম নীরবও সেই এলাকায় নির্বাচন করে। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুল আলম নীরবের ভালো চাইবে না। আমার মনে হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে খুশি করতেই সাইফুল আলম নীরবের উপর এই জুলুম, নির্যাতন, ২৪ ঘণ্টার লকাপ।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, স্বচ্ছ নির্বাচন হবে, বিদেশে যে যাই বলুক। বিদেশের সাথে আপনাদের শত্রুতা কেন। বারবার বিভিন্ন দেশ বলছে, স্বচ্ছ নির্বাচন দিতে হবে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনার কথার মধ্যে ইঙ্গিত বহন করে, যে আপনাদের উদ্দেশ্য অশুভ।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগ দিনের আলোতে প্রকাশ্যে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া বিশ্বাস করেন না। এটা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আর ঐতিহ্যের মধ্যেই তো বাকশাল। বাকশাল মানেই তো সব দল বন্ধ। ওই ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়েই তো আপনারা (আওয়ামী লীগ) গত ১৪ বছর জনগণকে কারাগারের মধ্যে ঢুকিয়েছেন। গোটা দেশকে কারাবন্দি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার গত পরশুদিন বলেছিলেন, কালো টাকা দিলে নিয়েন, কিন্তু স্বাধীনভাবে ভোট দিয়েন। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এই কথা বলতে পারে? আপনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) শেখ হাসিনার আদর্শে, আওয়ামী চেতনা, লুটপাট ও দুর্নীতির চেতনায় অনুপ্রাণিত। তাই কালো টাকা আপনি নিতে বলছেন। এই অনৈতিক কথার জন্য তার পতত্যাগ করা উচিত।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এত অবজ্ঞা কারণ, তার পরিবারের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে কোনো অবদান নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত ও কালিমালিপ্ত করাই বর্তমান সরকার প্রধানের কাজ। এটাই তিনি করেছেন।