‘দুর্যোগের ঝুঁকি মোবাবেলায় দরকার কার্যকরী পদক্ষেপ’
ঢাকা: কমিউনিটি ইনিশিয়েটিভ সোসাইটি (সিআইএস) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য এশিয়া প্যাসিফিক অ্যালায়েন্স ফর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (এ-প্যাড) “দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (ডিআরএম) এবং টেকসই উন্নয়ন” শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) এ দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম সম্মেলনের বিষয়টি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ট্রাস্ট এর পরিচালক, (জনসংযোগ) মো: ওয়াকার হোসেন।
কোভিড-১৯ সুরক্ষার সকল নির্দেশিকা অনুসরণ করে উক্ত সম্মেলনটি পরিচালনা করা হয়। এ-প্যাড বাংলাদেশের স্থানীয় অংশীদার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারী সেক্টরসমূহের সমন্বয়ে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী সেশনে স্বাগত বক্তব্যে ডিসিএইচ ট্রাস্টের কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর মাহমুদর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছর যাবৎ দুনিয়াজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভয়াবহ আকারে বেড়ে গেছে।
আমাদের ফুসফুসের মতো বনাঞ্চল বিনাশ, অতি মাত্রায় জ্বালানীর ব্যবহারে প্রকৃতির এই ধ্বংসাত্মক রূপ মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি এই দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্যও সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিআইএস এবং এ-প্যাড-এর কার্যক্রম এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই পরিচালিত হচ্ছে। এই সিম্পোজয়াম সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশে নিয়োজিত জাপানের রাষ্ট্রদূত মি. আইটিও নওকি বলেন, “এই নিয়ে তিনি বিভিন্ন উপলক্ষে তিন বার ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে এলেন এবং প্রতিবারই মুগ্ধ হয়েছেন। বাংলদেশের জন্মলগ্ন থেকে জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকাবেলা সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশও ২০১১ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জাপানের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণতা ও ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।”
সিআইএস-এর চলমান কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এ-প্যাড ও সিআইএস-এর মাধ্যমে জাাপান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে আসছে। এই সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।”
এ-প্যাড এবং ডিসিএইচ ট্রাস্ট চেয়ারম্যান প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান তার বক্তব্যে জাপান এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত মি. আইটিও নওকিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “মানব সভ্যতার আদিকাল থেকে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই মানুষ টিকে আছে। পৃথিবীর মধ্যে দুর্যোগ কবলিত এশিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে দুর্যোগ প্রবণ দেশ হলো বাংলাদেশ। সারা দুনিয়ায় জলবায়ু দূষণের বিষয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। প্রকৃতির সুরক্ষা ও দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ-প্যাডের প্রধান নির্বাহী কেনসুক ওনিশে জুম লিংকের মাধ্যমে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে দুর্যোগ ঝুঁকি নিরসনে এ-প্যাডের সামগ্রিক কর্মকান্ড তুলে ধরেন। সিআইএস-এর নির্বাহী পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা তার আলোচনায় সিআইএস ও এ-প্যাড যৌথভাবে বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বহু-সেক্টর প্লাটফরম প্রতিষ্ঠা ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনের যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।
সিম্পোজিয়ামে জুম লিংকে অংশগ্রহণকারী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে এম আলী রেজা সরকারের ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারের দারিদ্য্র বিমোচন কর্মসূচীর কথা উল্লেখ করেন। সেই সাথে দুর্যোগ মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীর বিষয়ে তুলে ধরেন।
সিম্পোজিয়ামের এই সেসনের আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন ঢাকা কমিউনিটি মেডিকিল কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক সারিয়া তাসমীন, অধ্যাপক আবদুল কাদের খান, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার জনাব সাইদুল ইসলাম প্রমুখ। এরপর সিম্পোজিয়ামের “টেকসই উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব” এবং ” দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় জনসাধরণের সহনশীলতার ক্ষমতা বৃদ্ধি” বিষয়ে আরো ২টি সেসন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন এ-প্যাড-এর সদস্য দেশ, ইউএন, বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও এবং বাংলাদেশ সরকারের স্টেকহোল্ডার, এ-প্যাড অংশীদার, বেসরকারী বিভাগ এবং নাগরিক সমাজসহ আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্ল্যাটফর্ম-এর প্রতিনিধিবৃন্দ।
ভোরের পাতা/ভিআরথী