ভুয়া মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করছে র্যাব
ঢাকা; দারিদ্রতা বিমোচন ও সমাজসেবার নামে প্রতারণা করে বিপুল অঙকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ভুয়া মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত র্যাব নারায়ণগঞ্জ জামতলা এলাকা থেকে সাইদুজ্জামান নূর রাকিব নামে ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় র্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ পাসপোর্ট ও জাল নথিপত্রসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা ধোপাপট্টি এলাকায় সামছুল হুদার ৭ তলা বাড়ির ৬ তলায় তার ভাড়া বাসা। বাসার উপর ছাদে নূর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ও নূর পোপার্টি এলিভিয়েশন এন্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি নামে দুইটি ভূয়া মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের অফিস। সেখানে বত্রিশজন কর্মীও রয়েছে।
এছাড়া মাত্র অষ্টম শ্রেণি পাশ এই ব্যক্তি নিজেকে দৈনিক মানবতার আলো এবং নিউজ ডাইজেস্ট ওয়ার্ল্ড নামে দুইটি বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক দাবি করলেও এর কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের প্রতারণার অভিযোগ আসলে র্যাব তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং বৃহস্পতিবার অভিযান চালায়।
উদ্ধার করেছে প্রতারণার নথিপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের ভূয়া চেক-রশিদের ফটোকপি, অর্ধশত অবৈধ পাসপোর্ট, একটি টেলিস্কোপ, বিদেশ থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ২৮ হাজার টাকা মূল্যের ইতালির তৈরি একটি অত্যাধুনিক খেলনা পিস্তল ও বড় আকারের একটি ছুরি জব্দ করে র্যাব।
অভিযান পরিচালনাকারি র্যাব-১১ সিনিয়র সহকারি পরিচালক জসিম উদ্দিন চৌধুরি জানান, আটককৃত সাইদুজ্জামান নূর রাকিব রাশিয়া, থাইল্যান্ড ও দুবাইসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র সফর করেছে। সে এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থার বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে গত চার বছর আগে সরকারি অনুমোদনহীন অবৈধ প্রতিষ্ঠান খুলে মানুষের সাথে প্রতারণা শুরু করে।
মানবসেবা করে তিনি ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে পাওয়া বঙ্গবন্ধু পদক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পদক, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পদক, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পদক, মাদার তেরেসা পদক ও মহত্মা গান্ধী পদকসহ ত্রিশ পঁয়ত্রিশটি ভূয়া সম্মাননা পদক সাজিয়ে রেখে মানুষকে আকৃষ্ট করেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, মানবসেবার জন্য রাশিয়া থেকে ‘একশ’ কোটি টাকা পেয়েছেন এমন কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া শুরু করেন।
প্রতারণার মাধ্যমে এ পর্যন্ত তিনি কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকারও করেছেন।
তবে র্যাব বলছে, তার প্রতারণার শিকার এমন শতাধিক ব্যক্তির বায়োডাটা ও তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মামলা প্রত্রিয়াধীন রয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে। করে। একইসঙ্গে নূর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ও নূর পোপার্টি এলিভিয়েশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি নামে তার দুইটি ভুয়া যৌথ প্রতিষ্ঠানের অফিস সীলগালা করা হয়।
এ সময় র্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ পাসপোর্ট ও জাল নথিপত্রসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।