এবারের বাজেট ‘সংকটকে সম্ভাবনায়’ রূপ দেয়ার দলিল: কাদের

সময়: 12:11 pm - June 12, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 134 বার
১ সেপ্টেম্বর থেকে গণপরিবহন পুরনো ভাড়ায় ফিরবে: কাদের

ঢাকা: ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটকে করোনার বিদ্যমান ‘সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল’ বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার (১২ জুন) বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ দাবি করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবারের বাজেট ভিন্ন বাস্তবতায়, ভিন্ন প্রক্ষাপটে প্রণীত। এ বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লষণ করে; সংকটকালীন ও সংকট পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালঞ্জ মোকাবিলার গতিপথ নির্ণয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রণীত হয়েছে এবারের বাজেট। যা জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয় নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘গতানুগতিক ধারার সাথে ‘আউট অব বক্স’ চিন্তার সমন্বয় করে সংকট জয়ের নবোদ্যম সৃষ্টিতে এ বাজেট পেশ করা হয়েছে। বাংলাদশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শীর্ষক যুগাপোযাগী ও জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নের জন্য বাংলাদশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট সকলর প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে কয়েক মাস ধরে বিপর্যয়ের পরও আমাদের বাজেটের আকার কমেনি বরং বেড়েছ। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছর বাংলাদশের অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির সুফল এই বাজেট। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি মানুষর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা, মানুষ যেনও কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়।’

সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর যে অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট বলা যেতে পারে। ১৯টি প্যাকেজ জননত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রণোদনাটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাচ্চ, যা জিডিপি’র ৩.৭ শতাংশ। করোনা মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা ও কর্মোদ্যোগ বিশ্বখ্যাত দ্যা ইকানমিস্ট, ফোর্বস, ওয়ার্ল্ড ইকোনামিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দ্যা ইকোনমিস্ট গত ২ মে গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে ৪টি মানদণ্ডের ভিত্তিত ৬৬টি উদীয়মান সফল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম দেখিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকজের প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে।’

বাজেট প্রণয়নে দুটি অনিশ্চয়তা ছিলো জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই বাজেট প্রণয়নে দুটি অনিশ্চয়তা ছিল, যা জয় করা ছিল দুরূহ। অনিশ্চয়তা দুটি হচ্ছে- বাংলাদশে করোনা মহামারি চূড়ান্ত পর্যায়ে কী হবে, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনও স্বচ্ছ ধারণা না থাকা এবং করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে এখনই বলতে না পারা। এই অনিশ্চয়তা জয় করে দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলার একমাত্র ত্রাণকর্তা সাহসী নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা জননত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলভাবে বাজেট প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছেন।’

এবারের বাজেট শিক্ষার পরপরই স্বাস্থ্যখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছর স্বাস্থ্যখাতে মোট বরাদ্দ ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যা জিডিপি’র ১.৩ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৭.২ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দর হার বদ্ধি পেয়েছে ২৩.০৪ শতাংশ। পাশাপাশি বার্ষিক উনয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখযোদ্ধাদের সম্মানী বাবদ ৮৫০ কাটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

এসময় বিএনপির সমালোচনা করে পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, বাজেট ঘোষণার সাথে সাথে কোনও ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করেই বিএনপিসহ কতিপয় মহল আগে-ভাগে প্রস্তুত করা ও মনগড়া, পুরোনা ও গতানুগতিক গল্পের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকে। বিএনপি নেতারা গত ১১টি বাজেট ঘোষণার পর বাজেট নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন এবং বরাবরই বলেছেন বাজেট বাস্তবায়ন হবে না; অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ধরনের বিদ্বষমূলক মন্তব্য করেছেন।’

বাজেট নিয়ে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এবারও তারা সংকট জয়ের সুপরিকল্পিত কর্মোদ্যোগ এই বাজেটের বিরুদ্ধে চিরায়ত ভঙ্গিতে মিথ্যাচার করছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় মাত্র ৫০ হাজার কাটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছিল। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজকের বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় শুধুমাত্র স্বাস্থ্যখাতেই ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের পক্ষে এই বাজেটের ব্যাপকতা ও সম্ভাবনা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এটাই স্বাভাবিক।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এ দেশের মাটি ও মানুষের পাশে থেকে কাজ করে আসছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগর নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়। জনগণের ভালবাসায় অভিষিক্ত হয়ে টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযাগ পেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন।’

বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় নিরলসভাব কাজ করে যাচ্ছেন বলেও যোগ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

এই বিভাগের আরও খবর