স্বাস্থ্যবিধি নেই, অতিরিক্ত ভাড়ায় চলছে গণপরিবহন

সময়: 7:02 am - July 9, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 62 বার
ঈদে ৯ দিন বন্ধ থাকবে গণপরিবহন

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানোর অনুমতি দেয় সরকার। তবে সে নির্দেশনা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।

বাসস্ট্যান্ডে ভিড় করছেন যাত্রীরা। যাতায়াত করছেন গাদাগাদি করে। শুরুতে ‘লোক দেখানো’ স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও পরে আর তোয়াক্কা করেনি বেশির ভাগ পরিবহনের চালক-হেলপার। চালক-হেলপারের মুখে নেই মাস্ক, যানবাহনে ছিটানো হচ্ছে না জীবাণুনাশক ওষুধ। দরজায় দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো ব্যস্ত হচ্ছে বলে বেশিরভাগ চালক- হেলপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

এর বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে বাকবিতণ্ড লেগেই আছে। তাই ভাড়া নৈরাজ্যরোধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন যাত্রীরা।

যাত্রীরা বলছে, প্রথম দিকে নিয়ম মেনে চললেও এখন স্বাস্থ্যবিধি মোটেও মানা হচ্ছে না গণপরিবহনে। দরজায় হেলপার গায়ে হাত দিয়ে যাত্রী তোলা করোনার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া স্প্রে তো করাই হয় না। আর সরকারের প্রজ্ঞাপন জারি করা ৬০ শতাংশ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিহনগুলো। যেখানে নগরীর আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাটের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ১০ টাকা হলেও এখন তারা আদায় করছেন ২০ টাকা। এতে করে যাত্রীদের সাথে বাকবিতন্ডা লেগেই থাকে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, নগরের গণপরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ইতোমধ্যে ২০ জন চালক ও যাত্রীকে জরিমানা করা হয়েছে। চালক, সহকারী ও যাত্রীরা মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় ছিলেন না। প্রতি দুই সিটে একজন বসার কথা থাকলেও কয়েকটি বাসে তা মানা হয়নি। তাই অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের দায়ে ১০ গণপরিবহন চালককে জরিমানা করা হয়। আবার বাসগুলোতে ৬০ শতাংশের বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে।

তিনি বলেন, কয়েকটি বাসে শুধু পানি দিয়ে স্যানিটাইজ করা হচ্ছিল, যা যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। স্বাস্থ্যবিধি পালনে অবজ্ঞা করে স্যানিটাইজার না রাখা, নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, পানি দিয়ে স্যানিটাইজ করা হচ্ছিল। এ বিষয়গুলোতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাই গণপরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি বাজায় রাখতে আমাদের অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

নগরীর আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট, চকবাজার নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাস, টেম্পো ও হিউম্যান হলার কোনো পরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাসে বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিল জনপ্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা। কিন্তু এখন জনপ্রতি বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা। লালদিঘী থেকে সিইপিজেড মোড়ের আগে বাস ভাড়া ছিল ১০ টাকা এখন আদায় হচ্ছে ২০ টাকা। চকবাজার থেকে বারেক বিল্ডিং মোড়ে টেম্পো ভাড়া ১২ টাকার বদলে আদায় হচ্ছে ৩০ টাকা। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আন্দরকিল্লা হিউম্যান হলার ভাড়া ১০ টাকার বদলে আদায় হচ্ছে ২০ টাকা করে। ৬০ শতাংশ বাড়তি অজুহাতের কথা বলে আদায় করছে অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ ভাড়া। এছাড়া উঠানামা ১০ টাকা করে প্রত্যেক পরিবহনই আদার করছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডা লেগে রয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের(সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস.এম মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা সড়কে নিয়ম মানছে না, তাদেরকে আমরা মামলা দিচ্ছি। গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং মোটরসাইকেলে তিনজন থাকলে মামলা দেওয়া হচ্ছে। সকল সার্জেন্টকে নিদের্শনা দিয়েছি ইতোমধ্যে। এছাড়া বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্টও পরিচালনা হচ্ছে। আমাদের কাছে যদি কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকে এক্ষেত্রে আমরা কঠিন নির্দেশনা দিয়ে থাকি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার যেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ওগুলো আমরা যাচাই বাচাই করছি।

বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরের জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের মোবাইল কোর্ট চলমান রয়েছে। যে সকল গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মানছে না এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ আসছে আমরা তাদেরকে জরিমানা করছি। তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন পরিচালনা করে এবং সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া যেন আদায় না করে এজন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, এখনো মানুষ সঠিকভাবে স্বাস্থবিধি মানছে না বিধায় করোনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছিল তা কেউ মানছে না। সবাই যদি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারি নির্দেশনা মানতো তাহলে করোনা পরিস্থিত এতো খারাপ হতো না। জীবিকার তাগিদে মানুষ বাহিরে যাবে, চলাচল করবে এটা স্বাভাবিক। যারা কর্মস্থলে যাবে তাদেরকে মাস্কসহ স্বাস্থবিধি মেনে অবশ্যই যেতে হবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, গণপরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা মানে বাটপারি ও প্রতারণা করার সামিল। আমরা প্রত্যেক গাড়ির মালিককে বলে দিয়েছি যেন সরকার যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, তা মেনে যেন গাড়ি পরিচালনা করে। একইসঙ্গে প্রত্যেক গাড়ির শ্রমিককে বলা হয়েছে তারাও যেন সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করে। যারা সড়কে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোন মামলা মোকদ্দমা দেয় তাহলে সংগঠন থেকে কোন দায়-দায়িত্ব নিবে না।

এই বিভাগের আরও খবর